অপরাজিত করপোরেট মায়েরা

0

0520140511094518নিয়াজ মাহমুদ
‘ওকে বাসায় রেখে কাজে মন বসে না। অফিস টাইমে সিরিয়াস মিস করি। আমি কখন বাসায় যাব, তার অপেক্ষায় বসে থাকে দেড় বছরের জুয়েনা মেহজাবিন। ওর ভবিষ্যৎ গড়াটাই যেন আমাদের জীবনের বড় সংগ্রাম। আর এ সংগ্রামে হারতে আমি রাজি না।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জান্নাতুল তামান্না রাইজিংবিডির সঙ্গে এমন ভাষায় তার অভিব্যক্তি তুলে ধরলেন। জুয়েনা মেহজাবিন নামের দেড় বছরের এক কন্যা সন্তানের মা তিনি।

তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে উপস্থিত থাকতে হয় কর্মজীবী নারীদের। বাসা থেকে বের হতে হয় আরো ঘণ্টাখানেক আগে। আর বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা ৭টা। এর মাঝে প্রায় ১১ ঘণ্টা মেয়েকে বাসায় রেখে কাজে মন বসানো কষ্ট।

জান্নাতুল তামান্না বলেন, ‘যখন বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হই, তখন ওরও (জুয়েনা মেহজাবিন) এবং আমরাও অনেক কষ্ট হয়। তবে বাসায় যাওয়ার পরে ও আনন্দে যেন আত্মহারা হয়ে যায়। ওই মুহূর্তে মা হিসেবে আমারও বেশ আনন্দ লাগে। অবশ্য বাসায় জুয়েনার নানু ওর সেবায় নিয়োজিত থাকেন। তারপরেও ওর কাছে থাকতে না পেরে আমি কষ্ট পাই।’

এরপরেও কেন চাকরি করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে করপোরেট জগতের এ ‘মা’ বলেন, কোম্পানি সকল সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে কিছু তো একটা করতে হবে। একজন মা হিসেবে এ কাজটা করা আমার দায়িত্ব। তাই চাকরি করছি। যখন বৃদ্ধ হব, তখন তো ওরাই (সন্তানরা) আমাদের দেখবে।’

এমন আশায় বুক বেঁধে দেশের করপোরেট হাউজগুলোতে কাজ করছেন হাজারো নারী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ শতাংশ নারী কাজ করেন। আর এই কর্মজীবী নারীরা তাদের
সন্তানকে রেখে আসেন গৃহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনের কাছে। এতে করে এসব সন্তান মায়ের আদর বঞ্চিত হয়ে বড় হয়ে উঠছে।

আর মায়েদের অফিসের কাজে মনোযোগী করতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছে বেশ করেকটি প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রেক্ষাপটে শিশু সুরক্ষার জন্য ডে কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্রই কর্মজীবী মায়েদের প্রধান আস্থা। তারপরেও সন্তান নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তায় কাজ করতে পারেন না কর্মজীবী মায়েরা। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই শত বাধা উপেক্ষা করে চাকরি করে যাচ্ছেন মা।

কর্মজীবী জীবনসংগ্রামী মায়েদের কষ্ট লাঘব করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে সকল তফসিলি ব্যাংকে ডে কেয়ার চালু করা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বেশ আন্দোলন করেই বাংলাদেশ ব্যাংকে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেই। যার ফলে বর্তমানে এখানকার কর্মজীবী নারী স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারছেন। অন্যান্য ব্যাংককে আমরা সিএসআরের আওতায় ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠায় বারবার তাগাদা দিচ্ছি। যাতে নারীরাও জীবনসংগ্রামে পুরুষের মতো অবদান রাখতে পারেন।’

কথা হয় চাকরিজীবী এক মায়ের বড় হয়ে ওঠা সন্তান সাজ্জাদ হোসের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মা অফিস করতেন। তাতেও তার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি। আবার তার শাসনেরও কোনো ঘাটতি ছিল না। যার ফলে আজ মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠা।’

সাজ্জাদ বলেন, মা অনেক সময় শাস্তি দিতেন। পরে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়েও দিতেন। তাই গায়কের ভাষায় গাইতে ইচ্ছে করে ‘নিজের সুখের কথা না ভেবে মা/ আমার কথা ভাবে/ সকল ব্যথা নীরবে সয়ে/ কাঁদেন আড়ালে/ তবু কষ্ট দেন না আমাকে/ স্নেহের পরশ দেয় বুলিয়ে/ মা আমার মা, মা আমার মা/ এই ভুবনে মায়ের মতো নাইরে মমতা।’

সূত্রঃ রাইজিংবিডি

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More