অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার আসামি এক নিরীহ শিউলি

0
রাজধানীর মিরপুর থেকে শিউলী নামে এই গৃহবধূকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাশে তার মেয়ে
রাজধানীর মিরপুর থেকে শিউলী নামে এই গৃহবধূকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাশে তার মেয়ে

ঢাকাঃ সামান্য একজন কেয়ারটেকারের স্ত্রী শিউলি বেগম (২৭)।. স্বামী আবুল কাশেমের মাসিক আয় মাত্র সাত হাজার টাকা। তা দিয়েই তিন সন্তানসহ চলে তাদের সংসার। বাড়ির মালিক বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন তার জীবদ্দশায় বাড়ির নিচ তলার একটি রুমে থাকতে দিয়েছিলেন ওই পরিবারটিকে। তার মৃত্যুর পর বাবার ওই মহানুভবতা থেকে সরে আসেননি তার সন্তানেরা। তাই ওই পরিবারটি এখনো থাকছে সেই রুমে। অন্তত বিনা ভাড়ায় রাজধানীতে থাকতে পারছে পরিবারটি। সেই থাকাটিই কাল হলো শিউলি বেগমের।

শিউলি বেগম এখন তিনটি মামলার আসামি। তাও যা-তা মামলা নয়। অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং দ্রুত বিচার আইনে মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত ৬৪(১২)১৩, ৬৫(১২)১৩ ও ৬৬(১২)১৩ ধারার মামলায় শিউলিকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অস্ত্র আইনের মামলায় পুলিশ তাকে রিমান্ডেও নিয়েছে।
সূত্র জানায়, মিরপুরের ওই বাড়িটির বর্তমান মালিক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ডব্লিউ। তার বাবা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন জীবিত থাকতেই বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন আবুল কাশেম। গত বুধবার ওই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। বাড়ির পাঁচতলা থেকে পুলিশ চার যুবককে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। শিউলি ওই বাড়িরই নিচতলায় থাকেন। পুলিশ যাওয়ার পরে বাড়ির গেট খুলতে সামান্য দেরি হয় শিউলির। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় পুলিশ। ওই চার যুবককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ শিউলিকেও ধরে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় পুলিশের কাছে শিউলি অনেক কাকুতি-মিনতি করেছেন। বলেছেন, ‘তার সাত মাসের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। তিনি একজন সামান্য গৃহবধূ। তিনটি সন্তান নিয়ে তার সংসার। তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন। রাজনীতি কী তা-ও জানেন না তিনি।’ কিন্তু পুলিশ তার কথা শোনেনি। নির্দয়ভাবে পুলিশ শিউলিকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনটি মামলায়ই তাকে আসামি করা হয়েছে। শুধু আসামি করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ২৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। তার আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, অস্ত্র আইনের মামলায় শিউলিকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ দাবি করেছে গ্রেফতারকৃত যুবকেরা একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। আর শিউলি তাদের সহযোগী। শিউলির স্বামী আবুল কাশেমও তাদের সহযোগী। জানা গেছে মামলায় আবুল কাশেমকেও আসামি করা হয়েছে।
শিউলি যখন আদালতে হাজির হন তখন তার সাত মাসের সন্তানটি কোলেই ছিল। মায়ের এই দুর্দশা দেখে বড় মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার করুণ চাহনি অনেককেই কষ্ট দেয়। ঘটনার পর থেকে পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে বাসা থেকে লাপাত্তা আবুল কাশেম।
এ দিকে কী কারণে শিউলিকে গ্রেফতার করা হলো সে সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মিরপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ডিউটি অফিসার জানান, এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। থানার ওসির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More