আগস্টে আন্দোলন নিয়ে ধেয়ে আসছে জামায়াত

0
Jamayatঢাকা: আন্দোলনের জন্য আগস্ট মাসকে টার্গেট করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ মাসে সরকার বিরোধী একদফা আন্দোলনে নামতে চায় দলটি। এ লক্ষে দলের অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি টার্গেট বাস্তবায়ন করেছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে দলটি।

জামায়াত নেতারা বলছেন, ঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত তারা। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও বিএনপির সঙ্গে দুরত্বের বিষয়ে তারা বলছেন, এটি স্রেফ (শুধুই) গুজব।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াত তাদের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন আনে। এ নির্বাচনের পর থেকে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি থেকে সরে আসে দলটি। সংসদ নির্বাচনের পর সাংগঠনিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে সরকার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে দলটি। প্রথম দুদফা নির্বাচনের ফলাফলে জামায়াত প্রার্থীদের বিজয়ে বিস্মিত হয়েছিল অনেকে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। পরবর্তীতে সরকারদলীয় প্রার্থীদের নানা অনিয়মের পরও দলটি বেশ নমনীয় ছিল।

সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াত যে মামলা ও হামলার শিকার হচ্ছে না এমনটি নয়, তবে কঠোর আন্দোলনে নেই দলটি। বর্তমানে মাঠ গরম করার মতো তেমন কোনো কর্মসূচিও নেই জামায়াতের। কেন জামায়াত এখন অনেকটাই নীরব তা নিয়ে অনেকেই এখন মুখ খুলছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে ব্যাপক হামলা-মামলার শিকার জামায়াত নির্বাচনের পর থেকে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। গত মে মাস জামায়াতের পক্ষ থেকে সারাদেশে গণসংযোগ চালানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকে টার্গেট দেওয়া হয় জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও দল গোছাতে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ সমর্থক বাড়ানো হয়েছে। 

মে মাসে জরুরি ফান্ডে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এ ফান্ডে অর্থ দিয়েছেন। জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, এ ফান্ডে  প্রত্যেক নেতাকর্মী তাদের এক মাসের আয় জমা দিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনের সদস্যরা এতে সাধ্যানুযায়ী অর্থ দিয়েছেন। সংগঠন করতে গিয়ে বর্তমানে যারা হামলা-মামলার শিকার ও যাদের প্রাণহানি ঘটেছে তাদের পরিবারের মাঝে এ ফান্ডের টাকা দেওয়ার জন্য দলটির কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়া মে মাসে সারাদেশকে ১৫টি অঞ্চলে ভাগ করে জেলা আমিরদের সমন্বয়ে সাংগঠনিক কর্মসূচি বাড়ানো হয় বলেও দলটির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আসন্ন রমজান মাসকে ‘আত্মশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণ’র মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে জামায়াত। রমজান শেষ হওয়ার আগেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কীভাবে আরো জোরালো করা যায় তা নিয়ে নানা চিন্তা- ভাবনা করছে জামায়াত।

জামায়াতের বর্তমানে ১৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ১৮ জন ভাইস-চেয়ারম্যান জেলে রয়েছেন। তাদের মুক্তির জন্য এখনো পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো তেমন কর্মসূচি দেয়নি দলটি। বর্তমানে ঘর গোছানোর পাশাপাশি বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদারের কাজে ব্যস্ত জামায়াতের বেশ ক’জন নেতা। দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এসব নেতা সারাক্ষণ এ সংক্রান্ত লবিংয়ে ব্যস্ত বলেও জানা গেছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিষয় নিয়ে লবিং জোরদার হয়েছে। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার আগে তার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। এখনো দলটির শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ যুদ্ধাপরাধ মামলায় যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের বিষয় মাথায় রেখেই বন্ধুদেশগুলোকে সব সময়ই হাতে রাখার চেষ্টা করছে জামায়াত।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মামলার আপিলের রায় ঘোষণা হতে পারে যেকোনো দিন। এ বিষয়টিও মাথায় রয়েছে জামায়াত নেতাদের।   

সাঈদীর আপিলের রায় পক্ষে না আসলে আবারো মাঠ উত্তপ্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু ঈদের আগে অর্থাৎ আগস্টের আগে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। 

আন্দোলনের বিষয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দলীয় প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জুলুম-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি জামায়াতের বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে তারা সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন।

সরকার অবস্থান পরিবর্তন না করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলেও তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। আর যুদ্ধাপরাধীদের মামলার বিচার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আপোসের বিষয়টিও তারা মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

এ বিষয়ে কথা হয় জামায়াতের একজন কর্ম পরিষদ সদস্যের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। ঈদের পর ১৯ দলীয় জোট আন্দোলনে যাবে। জামায়াত তো ১৯ দলীয় জোটের বাইরে নয়। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি স্রেফ গুজব। জোটের শরিকরা নিজ নিজ কৌশলে দল গোছাচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More