আসলেই কতটা ব্যর্থ রাজনৈতিক ইসলাম?

0

Political Islamআন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: রাজনৈতিক ময়দানে যখনই ইসলামপন্থিরা একটু পিছিয়ে পড়েন কিংবা ভোটের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন, তখনই বিশেষজ্ঞরা বলে বেড়ান- ‘রাজনৈতিক ইসলাম ব্যর্থ হয়েছে, ধসে পড়েছে এবং এর দিন শেষ হয়ে গেছে।’

বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং গণমাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর নজর রাখা পশ্চিমারা প্রচারণাও চালান। আর মুসলিম বিশ্বের গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে পশ্চিমাদের প্রতিধ্বনি করতে থাকে। তারা পশ্চিমাদের মতকেই নিঃসন্দেহ এবং নির্ভূল মনে করে গ্রহণ করে।

গত কয়েক মাসজুড়ে মিশরের ঘটনা প্রবাহ তাদের এ প্রচারণা এবং দাবির পক্ষে প্রচুর মশলা জুগিয়েছে। এতে করে তাদের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে বটে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো- রাজনেতিক ইসলাম ব্যর্থ হয়েছে, পশ্চিমাদের এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু?

রাজনৈতিক ইসলাম নামে যা পরিচিত তা কি সত্যি সত্যিই একটি উত্তরোত্তর পতন এবং চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও আসন্ন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? নাকি তা এক নতূন সূচনা এবং নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে? আর এসব ব্যর্থতা তারই পূর্ব অনুশীলনের একটি অংশমাত্র?

ইসলামপন্থিরা নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে ইসলামী আন্দোলন বলে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক ইসলাম শব্দটির ব্যবহার এড়িয়ে চলেন। ইসলামী আন্দোলন শব্দটি ব্যবহারের সুবিধা হলো- এটি দিয়ে ইসলামের সব কর্মকাণ্ডকেই বোঝানো যায়। এর মাধ্যমে ইসলামকে একটি জীবন বিধান হিসেবে এবং সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি সংবাদ হিসেবে উপস্থাপনের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, ইসলামই আজ দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা ধর্ম এবং জীবন পদ্ধতি। এছাড়া ইসলামের অনুসারিরাই তাদের ধর্ম রক্ষার্থে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটিও উৎসর্গ করতে সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত। আর এ বিষয়টিই তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। বিশ্বের কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ধারার এটাই সবচেয়ে বড় ভিত্তি। আর আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে এর বিস্তারও ঘটেছে ব্যাপক, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। বর্তমান দুনিয়ার আদর্শিক শূন্যতা, অস্তিত্ববাদি উদ্বিগ্নতা এবং আধুনিক মানব সভ্যতার উষ্ণতার উপাদান বা কেন্দ্রগুলো যেমন, পরিবার এবং গোত্র এসবের অবক্ষয়ের ফলে বিনা বাধায়ই এর বিস্তার ঘটে চলেছে।

এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন সরকারগুলো তাদের জনগনের যত্ন নেয়া ও দেখভাল করার দায়িত্ব পুরোপুরি ত্যাগ করছে। যার ফলে মানুষের উদ্বিগ্নতা এবং বিচ্ছিন্নতাও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। জীবন-যাপন পদ্ধতির ক্রমাগত সেক্যুলারাইজেশন বা ইহজাগতিকরণের ফলেই এমনটি ঘটছে। এর ফলে মানুষ উষ্ণতা এবং সংঘবদ্ধতার নতুন কেন্দ্র অনুসন্ধান করছে। যেখানে দেহ এবং আত্মা, ব্যক্তি এবং সমষ্টি, ধর্ম এবং জাগতিকতা, দেশপ্রেম এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ সবকিছুর একটা সমন্বয় করা সম্ভব হবে। ইসলামের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মিতাচারী বৈশিষ্টের মধ্যেই লোকে এসব খুঁজে পায়।

ফলে ইসলামের বিরুদ্ধে সমস্ত ঘৃণামূলক যুদ্ধ এবং একে দানবীয়রূপে চিত্রায়িত করার শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

মূল ধারার ইসলামী আন্দোলন সব সময়ই চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। আর এ ধরনের চরম পন্থা সব ধরনের আদর্শ এবং জাতির মধ্যেই থাকে। মূলধারার ইসলাম বিভিন্ন সভ্যতার সব অর্জন এবং অবদানের সমন্বয় করে নিজেকে একটি পূর্ণাঙ্গতা দান করে উপস্থাপন করে। ইসলাম আধুনিক সভ্যতার অর্জনগুলো যেমন: সব নারী-পুরুষের জন্য শিক্ষা, ইনসাফ বা ন্যায়বিচারের মূল্যবোধগুলো এবং ধর্ম বিশ্বাস, লিঙ্গ ও বর্ণের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বরং সাম্য, অধিকার এবং স্বাধীনতা এসবের স্বীকৃতিও দেয়। এর মধ্যদিয়ে ইসলাম সবার নাগরিক অধিকার, মানবিক অধিকার এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়। আধুনিক গণতন্ত্রেও যেমনটি করার কথা বলা হচ্ছে।

এসব অধিকার এবং স্বাধীনতা মানুষকে সহজাতভাবেই স্বর্গীয় আশির্বাদ স্বরূপ দান করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনেও এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। সূরা আল ইসরার ৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আর, আমরা নিশ্চয়ই আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি’।

ইসলামী আন্দোলনের মূল ভিত্তি হলো এই ধারণা যে, ইসলাম মানুষের একটি স্বভাবজাত ধর্ম। নিজস্ব মূল্যবোধ এবং মানুষের কল্যাণ করার যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইসলামের রয়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অন্যান্য সভ্যতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সহায়তা নিয়েও ইসলাম তার সমাজ এবং সমগ্র মানবজাতির সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করে।

এই আন্দোলনই আমাদের জনগোষ্ঠীগুলোর বিবেকের সবচেয়ে কাছাকাছি। এটিই তাদের মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা এবং ভাষার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ। এখন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যদি জনগণের সমস্যাগুলো ঠিকঠাক মত বুঝতে পারে এবং যদি জনগণের চিন্তা-ভাবনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাকগ্রাউন্ড অনুসারে তাদের সঙ্গে যোগযোগ স্থাপন করতে পারে তাহলে ইসলামের বিজয় আর কেউই ঠেকাতে পারবে না।

গত প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরেই ইসলামী আন্দোলনগুলো ক্রমাগত নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। এ নিপীড়ন হয়তো কখনো কখনো ক্ষণিকের জন্য থেমেছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার শক্তি সঞ্চয় করে ঝাপিয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে আরো বেশি হিংস্রতা নিয়ে।

এই ক্রমাগত নিপীড়নের ফলে ইসলামী আন্দোলনের সমুধিক ক্ষতি হয়েছে। যেমন: ইসলামপন্থিদের মধ্যকার রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা এবং সংগ্রাম যা তাদের একত্রে বেধে রেখেছিল এবং গত তিন প্রজন্ম ধরে যে অংশীদারিমূলক ইতিহাসের অভিজ্ঞতা ছিল তা ধ্বংস হতে চলেছে। তবে এই নির্মম নিপীড়নের ফলে তাদের প্রতি জনগণের সাহানুভূতি আরো বেড়েছে। এতে করে অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে গেছে। কারণ জনগণ বে-ইনসাফের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে তাদের আত্মত্যাগের কথা সব সময়ই মনে রেখেছে।

ফলে আজ ইসলামপন্থিরা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদাকর এবং দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। জীবন সম্পর্কে সাধারণ জনগণের চিন্তা-ভাবনা এবং জনগণের সংস্কৃতির কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় মিশরের মত সব দেশেই তারা মর্যাদাপূর্ণ সব মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করছে। যেমন: জনগণের ইচ্ছার সুরক্ষা এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতার চর্চা করা প্রভৃতির জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। অধিকন্তু, বিপ্লবের মূল্যবোধসমূহ সংরক্ষিত করার জন্য তারা একটি গৌরবময় শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। যেমন: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বহুমুখিতা এবং ফিলিস্তিন ইস্যুর মত মিশরের প্রধান প্রধান জাতীয় ইস্যুতে সংকট নিরসনের নেতৃত্ব।

অথচ বহু দিনের পুরোনো মিশরীয় উদারবাদিরা, যাদের মধ্যে ওয়াফদ পার্টির মত উদারবাদিরাও রয়েছে, তারা সবাই প্রতিক্রিয়াশীল প্রতি-বিপ্লবের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা এজন্য সেনা মদদও চেয়েছে এবং ব্যালট বক্সের ওপর দিয়ে সেনাবাহিনীর ট্যাংককে মাড়িয়ে যেতে দিয়েছে। জনগণের ইচ্ছাকে পদদলন এবং তাদের দেহকে দমন-পীড়নের শিকার হতে দিয়েছে। গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে জেলে বন্দি করে রাখা এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি করার মত গর্হিত সব কাজেই তারা সমর্থন যুগিয়েছে।

মিশরীয় জাতির একটা প্রধান ইস্যু ফিলিস্তিন ইস্যুতে হামাসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুরসির সম্পর্ককে তথাকথিত আধুনিক উদারবাদিরা একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিত্রায়িত করে এটাকে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের অজুহাত এবং ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যবহার করেছে।

মিশরের এই তথাকথিত ‘আধুনিকতাবাদি’ অভিজাত এবং সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে থাকা সমর্থক গোষ্ঠীর এ ধরনের আচরণ একটি সম্মিলিত আত্মহত্যার শামিল নয় কি? স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান, যাদের হাতে তাদের বিশ্বাস ছাড়া আর কোনো অস্ত্রই নেই, অভিজাতরা তার সম্পূর্ণ বিপরীত এক অবস্থান নিয়েছে।

ঐতিহাসিক, কৌশলগত, এবং জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতি তাদের এই সমর্থনকে কোনোভাবেই কি উদারবাদি, প্রগতিশীল, জাতীয়তাবাদী বা সেক্যুলার বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়? এ ঘটনার মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক ইসলামের পরাজয় বা মৃত্যু ঘটেছে তাও কি আমরা বলতে পারি?

এ ব্যাপারে আমাদের কোনোই সন্দেহ নেই যে, মিশরে যা ঘটেছে তা রাজনৈতিক ইসলামের জন্য কোনো বিপর্যয় নয়, বরং দুর্ভাগ্যক্রমে এ এমন এক বিপর্যয় যার ফলে আরব সেক্যুলারিজম বা ইহজাগতিকতাবাদ এবং জাতীয়তাবাদের যে ন্যূনতম ঐতিহ্যটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও বিলীন হয়ে যাবে। যদি না তথাকথিত আধুনিকতাবাদি উদারবাদিরা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা না করে দেখে এবং হুঁশে ফিরে আসে।

এদিকে, সেনা অভ্যুত্থানের ফলে ইসলামপন্থিরাও তাদের ধ্যান-ধারণাগুলো ঝালাই করে নেয়ার ফুরসত পাবে। এছাড়া সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের চিন্তার ভুল-ভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার পদক্ষেপ নিতে পারবে। এতে করে তারা মিশর এবং অন্যান্য দেশেও রাজনৈতিক বিরোধের জায়গায় আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সময়টাতে। কারণ এ সময়টাতে শুধু একটি দল বা একটি বিশেষ প্রবণতা দিয়েই রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব নয়। আর শুধুমাত্র একটি প্রবণতা থেকেই এর সংবিধানও প্রণয়ন করা যাবে না।

মিশর এবং অন্যান্য দেশের ইসলামী আন্দোলনগুলো এ বিষয়টা অবশ্যই হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। এর মধ্যদিয়ে ইসলামী আন্দোলন সব জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতিও আরো উম্মুক্ত হবে। এর মধ্যদিয়ে এসব রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করার এবং জোট বাধারও সুযোগ পাবে। এমনকি তারা ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোতেও নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাবে। কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে পুরো মিশরীয় জাতিরই ইসলামের প্রতি অধিকার রয়েছে।

শুরু থেকেই মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের রাজতান্ত্রিক শাসক থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক শাসক সবার হাতেই নিপীড়িত হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে গামাল আব্দুন নাসেরের শাসনকালে সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। তবে বর্তমানে জেনারেল আল সিসির হাতে সংগঠনটি যে মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তা পরিমাণগত এবং গুণগত উভয় দিক থেকেই নজিরবিহীন।

বিগত ৬০ বছরে সংগঠনটির সর্বোচ্চ মাত্র ৬০ জন নিহত হয়। কিন্তু সিসির সময় সংগঠনটির ওপর এক প্রকার গণহত্যাই চালানো হয়েছে। কয়েক হাজার সদস্যকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের শান্তিপূর্ণ এবং বিরোচিত প্রতিরোধ দমনে মিশরের সেনা মদদপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের আচরণ থেকে তাদের দেউলিয়াপনা, অযোগ্যতা এবং দায়হীন চরিত্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

গামাল আব্দুন নাসের এবং আল সিসির সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর নিপীড়নের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। নাসের শুধু তাদের ওপর নিপীড়নই চালাননি বরং ব্যালেন্স করার জন্য তাদের প্রস্তাবিত অনেক সামাজিক সংস্কার বাস্তবায়নেরও পদক্ষেপ নেন।

নাসের ইসলামপন্থিদের প্রস্তাবিত অনেক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নেরও পদক্ষেপ নেন। যেমন: কৃষি সংস্কার প্রকল্প, শিক্ষার বিস্তার, আল আজহার শিক্ষায়তনের উন্নয়ন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, সমগ্র আরব জাহানকে ঐক্যবদ্ধকরণ, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা এবং স্নায়ু যুদ্ধকালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগদান।

কিন্তু আল সিসি জনগণের কল্যানে আসে তেমন কিছুই করেননি। তিনি বরং মুসলিম ব্রাদরহুডের ওপর নিপীড়নের বৈধতা দেয়ার জন্য সব ধরনের হীনপন্থা অবলম্বন করেছেন এবং প্রকাশ্যেই এখনো করে চলেছেন।

আজকাল স্বৈরশাসকরা দিনের আলোতেই তাদের কুকর্ম চালিয়ে যান। যা এমনকি ফেরাউনদের যুগেও করা হত না। ফেরাউনরাও তাদের কুকর্মগুলো গোপনেই করতেন। মুসা নবীর সময় ফেরাউন ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি নিজে যা দেখি বা জানি তা ছাড়া অন্য কিছু আমি তোমাদের দেখতে বা জানতে দেই না’।. আর এভাবেই তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি তার জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেন।

ফেরাউনদের যুগ গত হয়েছে বহুদিন আগেই। এখন স্বৈরশাসকদের কুকর্মগুলো সংঘটিত হচ্ছে আমাদের চোখের সামনেই। এখন সবার জন্য সব ধরনের তথ্যই উম্মুক্ত। ফলে এ যুগে আল সিসির মতো স্বৈর শাসকদের আর কোনো ভবিষ্যত নেই।

এবার আমি আপনাদের পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এটা নিশ্চিত করছি যে, রাজনৈতিক ইসলাম পরাজিত হয়নি। না মিশরে, না অন্য কোথাও। কারণ ইতিহাসের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানেই ইসলামী চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা এবং মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

পশ্চিমা আধুনিকতা শুরু থেকেই আমাদের ইসলামী জগতের ওপর ট্যাংক নিয়ে হামলা করে আমাদের অভিজাতদের তাদের গোলাম বানায়। ইসলামকে তারা ঠেলে দেয় সমাজের একেবারে নিচু তলায়। এর বিনিময়ে স্বাধীনতা, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, ঐক্য অথবা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার ব্যাপারে তারা গাল ভরা যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার সবই বিফল হয়।

ওসব অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের তাগিদেই ইসলামে চিন্তার একটা পুনঃজাগরণ ঘটেছে। এই রেঁনেসা প্রকল্প পশ্চিমা আধুনিকতার ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রত্যাখ্যান না কর বরং ইসলামের মধ্যেই আত্মস্থ করে নিতে চায়।

রাজনৈতিক ইসলাম নামে পরিচিত প্রকল্পটিরও পতন ঘটছে না। বরং এটি নিজের ভুল-ত্রুটি শুধরিয়ে নতুন করে শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। নিকট ভবিষ্যতেই তা দেখা যাবে। বর্তমানের এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে এজন্য আর দশকের পর দশক অপেক্ষা করতে হবে না।

এছাড়া নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কোনো ভিশন ছাড়াই নগ্ন স্বৈরশাসনের মুখে রাজনৈতিক ইসলামের বিজয় আরো সহজ হয়ে যাবে। কারণ ইসলামপন্থিদের এসব বিষয়ে অনেক উন্নত ভিশন রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের বীজ তাদের সমাজের অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত। এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং অংশীদারিমূলক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা স্বৈরচারী এবং দমন-পীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয়। তাছাড়া এই আন্দোলন পশ্চিমা আধুনিকতা এবং ইসলামের ইতিবাচক মূল্যবোধগুলোর সমন্বয় সাধন করেই নতুন সভ্যতা নির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে চাইছে।

(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত নিবন্ধটির লেখক শেখ রশীদ আল ঘানুসি। তিনি তিউনিসিয়ার ইসলামী আন্দোলন আল নাহদার প্রধান নেতা।)
(মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত নিবন্ধটির লেখক শেখ রশীদ আল ঘানুসি। তিনি তিউনিসিয়ার ইসলামী আন্দোলন আল নাহদার প্রধান নেতা।)
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More