এ্যানির প্রতি অসন্তোষ বাড়ছেই

0

image_80908_0ঢাকা: নানা কারণে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির প্রতি ক্ষোভ বেড়েই চলেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল এবং হাবিবুর রশিদ হাবিব সংগঠনটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এ্যানিকে ঘিরে ছাত্র নেতাদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। হতাশা তৈরি হয়েছে এ দুই নেতার নেতৃত্বকে ঘিরেও। এমনকি ছাত্রদল নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপারসনই।

সমালোচনা রয়েছে, কেন্দ্রীয় সংসদকে না জানিয়ে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কজন ছাত্রনেতাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছেন। দেখা করতে গিয়ে ছাত্রনেতাদের কয়েকজন বেগম জিয়ার সামনে হট্টগোলও করে এসেছেন।

ছাত্রনেতাদের অনেকে অবশ্য সন্দেহ করছেন, যারা হট্টগোল করেছেন তারা ছাত্রশিবির বা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

গত বুধবার শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির কেন্দ্রীয় সংসদের সভা আহবান করেন। সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ্যানিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ চরম হতাশা প্রকাশ করেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অষ্টম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এছাড়াও ডাকসুর সাবেক ভিপি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্র নেতা ড. আসাদ্জুামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বর্তমান ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ বক্তৃতা রাখেন।

আলোচনা সভায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির এক বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত ছাত্রদল নেতাদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ্যানি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ছাত্রদলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কারামুক্তির পর সংগঠনটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে।’

এমন বক্তব্যের পরই জ্যেষ্ঠ ছাত্র নেতারা চিৎকার করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে খালেদা জিয়া যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তাদের ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয়তার জন্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর এ্যানির সমন্বয়হীনতা দায়ী।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রশিবির তাদের সভাপতিকে কারাগারে রেখে যদি নতুন কমিটি গঠন করতে পারে তাহলে ছাত্র দলের সমস্যা কোথায়? একদিকে বলা হচ্ছে ছাত্রদল ব্যর্থ আবার বলা হচ্ছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মুক্তির পর নতুন কমিটি। ব্যর্থদের জন্য এতো দরদ কেন?’

ছাত্রদলের অপর এক নেতা বলেন, ‘ছাত্রদলকে একসময় আন্দোলনের ভ্যানগার্ড বলা হলেও এ্যানি চৌধুরীর কারণে ছাত্রদলকে এখন যুদ্ধের ময়দানে আহত ঘোড়ার মতো মনে হচ্ছে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন সংগঠনটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউটে আলোচনা সভা ও বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় ।এ উপলক্ষে ঢাকার সবকটি ইউনিটের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ছিল সরব উপস্থিতি। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ- যারা দীর্ঘদিন অনেক ত্যাগ স্বীকার, আন্দোলন সংগ্রাম আর কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে যার যার অবস্থানে উঠে এসেছেন। বিশেষ ছাত্রজীবন শেষ করে যাদের সমবয়সী অরাজনৈতিক বন্ধুদের মতো চাকরি বা অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়ে সংসারী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে তারা বেছে নিয়েছেন ছাত্ররাজনীতি এবং প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হয় নির্মম বাস্তবতার। এখন যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল করছেন তা বিশ্ববিদ্যালয় হোক আর হল কমিটি হোক তারাও আমাদের পথেই হাঁটবেন বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী (খালেদা জিয়া) সেদিন মিটিংয়ে অনেক দরদ দিয়ে আমাদের বলেছিলেন তোমরা এখনও ছাত্ররাজনীতি কর, তোমারা তোমাদের খরচ চালাও কিভাবে? অনেকে উত্তরে বলেছেন, ‘বাবা-মা খরচ দেন। আবার কেউ নিশ্চুপ থেকেছেন। আবার কেউ বলেছেন নিয়মিত কমিটি হলে আমাদের এখনো ছাত্র রাজনীতি করতে হতো না ।

বায়েজিদ আরেফিন বলেন, ‘আমি আজকে সভার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষন করে দেখলাম কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রায় সবারই রয়েছে সাহসী অতীত এবং দলের জন্য কিছু করার প্রচণ্ড ইচ্ছা। কিন্তু ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে গেলে অন্তত একটা রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সকলের মধ্যে সমন্বয় দরকার।’

অবশ্য প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ সরকার থাকলে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তার ফিরে আসা নিশ্চিত করতে হবে। আর এতে ছাত্রদলকে কঠোর ও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More