ক্রমেই তাল হারাচ্ছে সরকার

0

p-178-311x186বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটবিহীন নির্বাচনের চারমাসেই নানা ধরনের বির্তকে ক্রমেই তাল হারাচ্ছে সরকার। গত ৫ জানুয়ারি ‘বিতর্কিত’ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা না হলেও দেশ পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রেই হোঁচট খাচ্ছে সরকার।

রাজনৈতিক কর্মসূচিমুক্ত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের অপকর্মের কারণে সরকার ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। কোনোভাবেই দেশে শান্তি আনতে পারছে না সরকার। সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যার ঘটনায় সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর পরিবার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সরকার আরো বিব্রত হয়ে পড়েছে।

এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সর্বশেষ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভার বাইরে রয়েছেন, তারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে দাড়ি-কমা ঠিক রেখে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন।

গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন-পূর্ব কৌশল বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনৈতিক বিষয়ে একেবারেই নিরব ছিলেন। গণমাধ্যমে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতায় আর চুপ থাকতে পারলেন না সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

গত শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিশেষ সহকারী বলেন, “আওয়ামী লীগ হিটলার মুসোলিনির মতো দেশ চালাচ্ছে। ক্রমেই এ সরকারের জনপ্রিয়তা কমে আসছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।”

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশ্ন রেখে বলেন, “এটা কেমন দেশ? বর্তমানে দেশে কোথাও গণতন্ত্র নেই।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের গত কয়েকদিন ধরেই সাম্প্রতিক অপরহণ, খুন ও গুমের বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। এসব ঘটনায় সরকার দায় এড়াতে পারে না বলেও বিভিন্ন সভায় বলে এসেছেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।”

তিনি বলেন, “র‌্যাবের যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরও শাস্তি হবে। প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে ইতোমধ্যে তিনজনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।”

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পক্ষে সাফাই গাইতে এসে হিতে বিপরীত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে। চাঁদপুর জেলার জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলার কিছু জনপ্রতিনিধিরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে তারা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পরিবারকে জড়িয়ে গত কয়েক দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানান।

বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্ন শুরু করলে আয়োজকরা সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। ফলে অভিযোগ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পরিবার মুক্ত হতে পারেননি বলে অনেকে মনে করছেন। এ ঘটনায় মন্ত্রী পরিবারের বিরুদ্ধে সন্দেহের তীর আরো ঘনীভূত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে শুধু বিএনপি-জামায়াতকে দোষ দিয়েই পার পাওয়া যাবে না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় কি পার পাওয়া গেছে? কার মুখ বন্ধ করবেন? আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুরা নীরবে দেশ ত্যাগ করছে। এ পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার একটির মামলাও তদন্ত হয়নি। আমার দেশ, আমার সরকার, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সরকার হওয়ার পরেও এমনটি হচ্ছে। আমরা বিচার করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। দেশকে সহিংস রাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে।”

জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “মহাজোট সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় মহাজোট সরকারের কতিপয় কুলাঙ্গার জড়িত। সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত হামলা করা হয়েছে। একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর এই হামলা করে আসছে।”

এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় সরকার জিরো টলারেন্সে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

অপরদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা সবার কাছে দুঃখিত।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More