চট্টগ্রামে ২০ সুন্দরীর প্রেমের ফাঁদ

0

20 Beautyসুন্দরী নিয়ে তাদের কারবার। মেয়ে মানুষ দিয়ে বোকা বানানো হচ্ছে কৌশল। আর এ কৌশলের ফাঁদে পা দিচ্ছেন ব্যবসায়ী কিংবা থানার এসআই। বাদ নেই চাকরিজীবীও। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে কখনও দিতে হচ্ছে মুক্তিপণ। আবার কখনও অন্য কিছু। অনেকের তাই ভাঙছে সাজানো সংসার। রূপের মোহে পরনারীতে আকৃষ্ট হয়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে সুন্দর জীবন। চট্টগ্রামে ফাঁদ পেতে এভাবেই মুক্তিপণ আদায়ে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে ২০টির বেশি সুন্দরী সিন্ডিকেট। একাধিকবার এসব সিন্ডিকেটের বেশির ভাগ সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর পরই তারা প্রতারণার মামলা থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আবারও ব্ল্যাকমেইলিং করছেন লোকজনকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য মতে, একটি চক্রের মূল হোতা ওমর ফারুক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ইপিজেড এলাকার গার্মেন্টে নিয়োজিত অসহায় সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে সে লোকজনকে ব্ল্যাকমেইলিং করে আসছে। চলতি বছরের ১৪ই আগস্ট চাকরির লোভ দেখিয়ে এক তরুণীকে বাসায় এনে আটকে রেখে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করায় ফারুক। পরে এ খবর জানাজানি হলে নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে চক্রের মূল হোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। ধরা পড়ার আগের দিন চান্দগাঁওয়ের ফরিদারপাড়া এলাকার মাহবুবুল আলমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় আরও এক নারীর নাম বেরিয়ে আসে। সে হলো মণি বেগম। তার স্বামী বদিউল আলমও এ চক্রের অন্যতম সদস্য। জনৈক তরুণী বিষয়টি টের পেয়ে তাদের হাত থেকে পালিয়ে তার ভাই মীর কাসেম নামের অপর এক ব্যক্তিকে ঘটনাটি জানায়। পরে তিনি বাকলিয়া থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা করেন। এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মো. মহসিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে বদিউল আলম স্বীকার করেছে সে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে চাকরির প্রলোভনসহ নানা কৌশলে তরুণীদের ডেকে এনে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতো। নগরীর আরও কয়েকটি স্থানেও তার এমন ভাড়া বাসা আছে। সে বাসাগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তারও আগে গত ২৮শে জুলাই পাঁচলাইশ থানার বেবি সুপার মার্কেট এলাকার একটি বাসা থেকে ছয় অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা মেয়েদের দিয়ে সাধারণ লোকজনকে বাসায় ডেকে এনে ভিডিও ক্যামেরার ফাঁদে ফেলতো। সহজ-সরল মানুষজন প্রেমের ধোঁকায় পড়ে অন্তরঙ্গ হতে গিয়েই নিঃস্ব হতো। এ চক্রের হাতে ১০-১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে- এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা পুলিশের কাছে রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন অপহরণ চক্রের প্রধান চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু, তার স্ত্রী শেলি আক্তার, লোহাগাড়া আজিজনগর এলাকার শারমিন আক্তার প্রিয়া, কক্সবাজার জেলা পেকুয়া উপজেলার মো. সেলিম, পটিয়া এলাকার মো. ওসমানসহ ১০-১২ জন। ঘটনার সময় শাহাবুদ্দিনের বাসা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আঁখি আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিকসহ সাতজন মেয়ে ও বিত্তশালীদের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই পাঁচলাইশ থানার বেবি সুপার মার্কেট সালামপাড়া আদর্শ ভিলায় শাহাবুদ্দিনের বাসায় থাকত। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও ৩ সুন্দরী চক্রের ফাঁদের অজানা কাহিনী। তাদের প্রেমের ফাঁদে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন চট্টগ্রামের ১০০ ব্যবসায়ী। টাকা-পয়সা হারিয়ে পথে বসেছেন অনেকে। সামাজিক মানসম্মানের ভয়ে এতদিন মুখ খুলতে রাজি হননি বেশির ভাগ লোক। কেউ কেউ বিয়ে করেছেন। কেউ বা ছিলেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার কিংবা সরকারি চাকরিজীবী। লোকজনকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলতো সুন্দরীরা। তারপর পোজ দিয়ে সেই ছবি পরিবারের লোকজনের কাছে পাঠানোর হুমকি দিতো। বাধ্য হয়ে ফাঁদে
পা দেয়া ব্যক্তিরা তাদের কথামতো চলতেন। মাসে মাসে টাকা দিতেন। রাশেদা বেগম জ্যোৎস্না, তামান্না আক্তার ও ফাতেমা আক্তার নামের এ তিন সুন্দরীকে গ্রেপ্তার করায় বের হয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে হন্যে হয়ে তাদের খোঁজা হচ্ছিল বলে জানায় কোতোয়ালি পুলিশ। দশ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা অবৈধভাবে এ অপকর্ম করে আসছে। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছে আইয়ুব আলী ওরফে সবুজ, লিয়াকত আলী, ইকবাল নামের তিন ব্যক্তি। এরা সবাই এখন ধরা পড়েছে। জামিন নিয়ে বাইরে আছেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রতারিত ও তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী আবদুস সালাম মাতব্বর মানবজমিনকে বলেন, সুন্দরীরা ১০ লাখ টাকা না দিলে পরিবারের লোকজনের কাছে অন্তরঙ্গ ছবি পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে। খুন করারও হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সেই বাসা থেকে আমার স্ত্রীকে ফোন করে ৫০০০০ টাকা তাদের দিয়ে যেতে বলি। জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দো পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, এ ধরনের ২০টির বেশি সিন্ডিকেট রয়েছে। এদের কাজ হচ্ছে জায়গা বদল করে বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় গিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More