জাতীয় সমস্যাকে ইস্যু করে মাঠে নামছে ১৮ দল

0

18নিত্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কটসহ জনজীবনের নানা সঙ্কটকে ইস্যু করে সরকার পতনের আন্দোলনে নামছে ১৮ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি। এর আগে বিএনপিকে এমন জনমুখী আন্দোলনে মাঠে পাওয়া না গেলেও এবার নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নামছে নবম জাতীয় সংসদের বিরোধীদল বিএনপি। ইতোমধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের বছরগুলোতে একাধিক ইস্যু থাকলেও নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজপথ উত্তপ্ত করার কোনো সুযোগই কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। তবে এবার যদি আন্দোলন জমাতে পারে তাহলে সফলতাও পেতে পারে দলটি।

তবে বিএনপিকে কোনোমতেই রাজপথে নামার সুযোগ দেবে না ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের দাবি ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন মানে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। সেই সাথে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং খালেদা জিয়ার দুই ছেলের শাস্তি ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালানোর সুপরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি বলেও অভিযোগ আওয়ামী লীগের।

এরইমধ্যে তিস্তার পানি ও সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আগামী ২২ এপ্রিল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে তিস্তা অভিমুখে লংমার্চের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে এক যৌথসভা শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার দুপুরে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। লংমার্চ শেষে ২৩ এপ্রিল তিস্তার পাড়ে গালিয়াতে জনসভারও ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, “এই সরকার অবৈধ ও স্বৈরাচারী। এদের ওপর জনগণের আস্থা নেই। এমনকি তাদেরকে কেউ বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়নি।” তিনি বলেন, “জনবিচ্ছিন্ন এই শাসক গোষ্ঠীর পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে এবং গতিশীল নেতৃত্ব আনতেই জেলা কমিটি পুনর্গঠন করছি। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পরিবর্তনকে বলেন, “গণআন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যেসব কার্যকলাপ চালাচ্ছে তাতে ভদ্রলোকদের দেশে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।”

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের পরিবর্তনকে বলেন, “প্রধান দুই দলের এই বাকযুদ্ধে তৃতীয় কোনো শক্তি আবারো ক্ষমতা দখল করতে পারে।” বর্তমানে রাজনীতিতে বাকযুদ্ধ চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন দৃশ্যপট দেখা গেছে। সামনে হয়তো এটা বদলাতে পারে।” যোগাযোগমন্ত্রী আরো বলেন, “যে দেশের মানুষ জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেস বুকে নাম তুলতে পারে, সে দেশের ইতিহাস নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বিকৃতি করা যাবে না। দেশের রাজনীতিবিদরা যদি মাদকমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত হয় তাহলে দেশ পঞ্চাশ ভাগ মাদক মুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত হবে।”

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “খালেদা জিয়া না শোধরালে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “খালেদা জিয়া এখনো শোধরাননি। বৈধ সরকারকে অবৈধ বলছেন। জঙ্গিবাদীদের সঙ্গও ত্যাগ করেননি।”

তিনি খালেদা জিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি এই পথ পরিহার না করেন তাহলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।” তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারাই প্রকৃত ইতিহাস জানেন, তারেক নয়। দেশে জঙ্গিবাদ ও গণতন্ত্রের লড়াই চলছে।”

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন পরিবর্তনকে বলেন, “যারা জিয়া পরিবারকে নিয়ে কটূক্তি করে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা লুঙ্গি পরে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল।” তিনি আরো বলেন, “আন্দোলনের মাধ্যমে এ অবৈধ সরকারকে দ্রুত বিদায় করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া যখন আন্দোলনের ডাক দেবেন তখন সকলকে রাজপথে নামতে হবে।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম পরিবর্তনকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি জামাতের নেতাদের বাঁচাতেই মিথ্যাচার করছে বিএনপি।” ইতিহাস নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More