‘জামায়াতের অ্যাকশন কমিটি’

0

pic348ঢাকা: প্রায় সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শান্ত থাকার পর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক থাকা দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে আবারো ‘সাংঘর্ষিক আন্দোলনের’ জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জামায়াত-শিবির।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেয়া রায়ের প্রতিবাদে খুব শিগগির সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডসহ জামায়াত অধ্যুষিত দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে নামবেন দলটির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

নতুন করে উত্থান ঘটা এই আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সাংঘর্ষিক রূপের ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক হবে সে চিন্তায় জামায়াত অধ্যুষিত এই জেলাগুলোতে বসবাসরত মানুষ, বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী এরই মধ্যে বেশ আশংকার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

জামায়াতের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই আন্দোলনকে সফল করতে দলটিও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির এরই মধ্যে দলের তৃণমূল পর্যায়ে অনেকগুলো ‘অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করেছে। প্রতিটি কমিটির পেছনে রয়েছেন একজন করে সংগঠক এবং পৃষ্ঠপোষক।

দিনাজপুর জামায়াতের এক নেতা বলেন, “আমাদের দলের বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছেন। তাই ‘অ্যাকশন কমিটি’ গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের ‘অ্যাকশন কমিটি’তে এমন ব্যক্তিদের সদস্য করছি যারা আর কোনো কমিটিতে এর আগে ছিলেন না বা নেই।”

দিনাজপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সিরাত মাহফিল এবং পাঠচক্র হিসেবে একত্রিত হয়ে তারপর আন্দোলনের জন্য কর্মীদের প্রস্তুত করছেন।

পুলিশি ঝামেলা এড়াতে জেলার স্বল্প পরিচিত এলাকাগুলোতে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে জামায়াত। সাঈদীর জনসমর্থন আরো জোরদার করার উদ্দেশ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক প্রচারণাও চালাচ্ছে দলটি। দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা সাঈদীর রেকর্ড করা ধর্মীয় প্রচারণার বিভিন্ন অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট শোনাচ্ছেন ও দেখাচ্ছেন ওই অঞ্চলগুলোর জনসাধারণকে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টও জামায়াত নেতা সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখলে দলের তৃণমূলকে সংগঠিত হয়ে সাংঘর্ষিক আন্দোলন করার নির্দেশনা এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা।

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া এই মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নজিরবিহীন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় জামায়াত-শিবির। ওই একটি দিনেই দেশের ১৫টি জেলায় জামায়াত-শিবিরের দাঙ্গায় চারজন পুলিশ সদস্যসহ ৩৩ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

জামায়াত অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণকে নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। সংঘর্ষ ও নাশকতাসহ জামায়াত-শিবিরের যেকোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। কিন্তু তারপরেও আশ্বস্ত হচ্ছেন না অঞ্চলগুলোর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন তারা।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার নেতা আজাদ হোসাইন জানান, সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলে আবারো সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এড়ানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছেন তারা। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।

৫ জানুয়ারির একদলীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল আবেদনের রায় যেকোনো দিন দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়াও আরেক যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ নেতা নিজামীর মামলার রায় এখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আটকে আছে।

গত বছরের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনকে অবৈধ আখ্যা দেয় উচ্চ আদালত।

পরে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে জামায়াত সংশ্লিষ্ট মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নেয়। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি আটকে আছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গত ২৬ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১’র গোয়েন্দা সংস্থা একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনটিতে জামায়াতসহ এর আরো ছয়টি সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়। সূত্র: ডেইলি স্টার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More