হিন্দু দেবতা রামের জন্মভূমি আন্দোলনের নামে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যায় ষোড়শ শতকের স্থাপত্য বাবরি মসজিদকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ধর্মান্ধ কট্টরপন্থি হিন্দুরা। যদিও এতদিন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া উন্মত্ত জনতাই নাকি ঐতিহাসিক এই স্থাপত্য ধ্বংসের জন্য দায়ি। কিন্তু খোদ ভারতেরই সংবাদভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল কোবরা পোস্ট তাদের তদন্তে বের করে এনেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের রাজনীতিতে যথেস্ট প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
ওই ঘটনার জড়িত এমন ২৩ জনের উপর করা কোবরা পোস্টের স্টিং অপরেশনে দেখা গেছে, ধর্মান্ধ কট্টরপন্থি হিন্দুদের তথাকথিত সংগঠন সঙ্ঘপরিবার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের নীল নকশা তৈরি করেছিল অনেক আগেই। উন্মত্ত জনতা নয় সেই নকশার বাস্তব রূপ দিয়েছিল সঙ্ঘপরিবারের স্বেচ্ছাসেবকরাই। কোবরাপোস্টের তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী রামজন্মভূমি আন্দোলনের মুখ্য চরিত্র ছিলেন সাক্ষী মহারাজ, আচার্য্য ধর্মেন্দ্র, উমা ভারতী, মহান্ত বেদান্তী, বিনয় কাটিয়ার সঙ্গেই শীর্ষ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং এমনকি তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও নিজেও। তারা সঙ্ঘপরিবারের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরিকল্পনার কথা আগে থেকেই জানতেন। কোবরাপোস্টের সহকারী সম্পাদক কে আশিস উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা, ফৈজাবাদ, তান্ডা, লখনৌ, গোরখপুর, মথুরা, মোরাদাবাদসহ জয়পুর আউঙ্গাবাদ, মুম্বাই, গোয়ালিয়র ঘুরে এমন ২৩ জনের সাক্ষ্যাৎকার নিয়েছেন যারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে প্রতক্ষ্যভাবে জড়িত ছিলেন। কে আশিস এই ২৩ জনের সঙ্গে তার কথোপকথন রেকর্ডও করেছেন। যদি এই ২৩ জনের দাবি সত্যি হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে অযোধ্যাকে দেবতা রামের জন্মভূমি আন্দোলনের নেতা ও কর্মীরা মাসের পর মাস ধরে গোপনে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিলেন। এরজন্য স্বেচ্ছাসেবকদের রীতিমত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ছক করে ঘটনাটিকে এমন ভাবে সাজানো হয়, যাতে মনে হয় কিছু উন্মত্ত জনতাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য দায়ি।
index এদিকে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি এই স্টিং অপারেশনের তীব্র সমালোচনা করেছে। এর বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তবে নির্বাচনের আগে দিয়েই এ ধরনের তথ্য বিজেপিকে যে বিপাকে ফেলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বসের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় মুম্বাই ও দিল্লি শহরে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। সেসময় ওই দাঙ্গার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল।