ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিন প্রস্তাব

0
৫০ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
৫০ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ঢাকা: ফিলিপ লুথার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অ্যামন্সেটি ইন্টারন্যাশালের পরিচালক। সম্প্রতি তিনি ইসরায়েলের আগ্রাসনে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা পরিদর্শন করেছেন। গাজা পরিদর্শনের পর তিনি গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থায়ী শান্তি চুক্তির ব্যাপারে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে প্রত্যেকবার সংঘর্ষের পর যেভাবে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয় তার মাধ্যমে গাজার মানুষদের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এ জন্য নিম্নোক্ত তিনটি মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

১. বেঁচে থাকার অধিকার: 
৫০ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। যার মধ্যে পাঁটশো জনের অধিক নারী রয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশকে হত্যা করা হয়েছে বেআইনিভাবে এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। ইসারয়েলি হামলায় মানুষের বাড়িঘর গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হামাসকে লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলায় নিহত হয়েছে সাধারণ মানুষ। একই সময়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে চালানো হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে ৭০জন ইসরায়েলি। এটাও যুদ্ধের নীতির লঙ্ঘন।

২. আন্দোলন করা এবং মানসম্পন্ন জীবনযাপনের অধিকার
সাম্প্রতিক সংঘাতকে বুঝতে হলে আমাদেরকে একটু পেছন ফিরে দেখতে হবে। অনেক দিন ধরেই গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসারয়েল। ২০০৭ সালে গাজায় হামাস ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই অবরোধ আরও কঠোর করে ইসরায়েল। ফলে যে কোনো পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে অবরোধ আরো কঠোর হয়েছে।

ইসারায়েল এই অবরোধের কারণে গাজায় সব সময় বিদ্যুৎ জ্বালানি তেলের সংকট লেগে থাকে। গাজার ১৮ লাখ মানুষের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। এর কারণ গাজাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি এবং তেল নিতে দেয়া হয় না। ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া সুয়ারেজ যেমন ঠিক করা সম্ভব হয় না। তেমনিভাবে বিদ্যমান যন্ত্রপাতি দিয়ে অধিক পরিমাণ পানি উৎপাদনও সম্ভব হয় না। এমনকি গৃহনির্মাণ সামগ্রী নেয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দেয় ইসরায়েল।

এমনকি মাছ ধরার ক্ষেত্রেও জেলেরা মাত্র তিন মাইল এলাকায় নৌকা নিয়ে ঘোরাফেরার সুযোগ পাই। কৃষি কাজের ক্ষেত্রেও অবরোধের মাধ্যমে নানা বাধা দিয়ে আসছে ইসরায়েল। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মুমূর্ষু রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

৩. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধ করেছে। এই অপরাধের বিচার করতে হবে। এটা শুধুমাত্র গাজা ও ইসরায়েলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা তেমন নয়। বরং পুরো বিশ্বের জন্যই বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের কোনোভাবেই পার পাওয়ার সুযোগ দিতে পারি না। সাম্প্রতিক সংঘতকারীন ইসরায়েলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাউকেই গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি। যখন প্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছে তখন শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

গত জুনে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল একটি কমিশন প্রতিষ্ঠা করে যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ভাঙ্গা ঘটনার ওপর একটি গবেষণা করা। ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যার পর জারি করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা না করা সম্ভব হলে আবারো গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গণহত্যাজজ্ঞ প্রত্যক্ষ করবে বিশ্ব।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More