ফোন কোম্পানির শিল্পী ঠকানো বাণিজ্য

0

Bang কারো মোবাইলে ফোন দিয়েছেন, অপর প্রান্তে বাজছে জনপ্রিয় কিংবা আপনারই ভালো লাগার কোনো গান, বা পছন্দের কোনো শিল্পীর কণ্ঠ। এটি ওয়েলকাম টিউন হিসেবে পরিচিত। সব মোবাইল ফোন অপারেটরই এ ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে অনেকদিন যাবত। আবার মোবাইল ফোনের রিংটোন হিসেবেও অপারেটরগুলো থেকে কিনে নেওয়া যায় পছন্দের গান বা সংগীত।

এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে মোবাইল কোম্পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর সাথে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন থার্ড পার্টিও। যারা ফোন কোম্পানির সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে চুক্তি করেছে। যুক্ত আছে অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোও। তবে কোটি কোটি টাকার এই ব্যবসার সাথে কোনো ধরনের যোগসূত্র নেই শিল্পীদের। অধিকাংশ শিল্পীই তাদের গান ও কণ্ঠ ব্যবহারের জন্য ফোন কোম্পানি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সম্মানী পান না। গীতিকার ও সুরকাররাও পান না কোনো সম্মানী।

প্রতিটি ওয়েলকাম টিউনের জন্য একজন গ্রাহককে এক মাসের জন্য দিতে হয় কোম্পানি ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এর সাথে যোগ হয় ভ্যাট। ফলে গ্রাহককে প্রকৃত পক্ষে দিতে হয় ২৯ থেকে ৩৫ টাকা। এক বছরে একজন গ্রাহককে দিতে হয় ৩৪৮ থেকে ৪২০ টাকা।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত করা হিসাবে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮২ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ব্যবহারকারী চার কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার, বাংলালিংকের দুই কোটি ৯০ লাখ ৫১ হাজার, রবির দুই কোটি ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার, এয়ারটেলের ৮৩ লাখ ৬২ হাজার, টেলিটকের ৩২ লাখ ১২ হাজার এবং সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৮ হাজার।

সূত্র জানায়, ৩০ শতাংশেরও বেশি গ্রাহক ওয়েলকাম টিউন ব্যবহার করেন। সে হিসাবে অন্তত সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক ওয়েলকাম টিউন ব্যবহার করেন। এ খাতে বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর আয় ১০০০ থেকে ১২৫০ কোটি টাকা।

Bangladeshi

এদিকে লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের কোনো সৃষ্টি কোথাও ব্যবহার করলে সাধারণত ২৫ শতাংশ রয়্যালটি বা সম্মানী দেয়া হয়। এক্ষেত্রেও সেই হারে দিলে বছরে তার পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। যেসব গান ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেসবের শিল্পীর সংখ্যা ১০০-এর বেশি নয়। এর সাথে ১০০ গীতিকার এবং ১০০ সুরকার ধরলে সংখ্যা ৩০০-এর বেশি হয় না। সে হিসাবে প্রত্যেক গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর অন্তত এক কোটি টাকা করে সম্মানী পাওয়ার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্পী-গীতিকার-সুরকাররা এ টাকার কোনো অংশই পান না। হাতে গোনা দু-চার জন সামান্য কিছু টাকা পান।

অনেক শিল্পীর সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, তারা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই কোনো ধরনের টাকা পাচ্ছেন না। অনেকে অভিযোগ করেন, তাদের গান নিয়ে ব্যবসা করে আবার তাদের সাথে অন্যায় আচরণও করা হচ্ছে।

এব্যাপারে কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, “আমি আসলে এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাদের তো টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু পাই না। জানি না আসলে কিভাবে কী হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত। খুব বাজে একটা ব্যাপার। আমাদের টাকা দেয়ার কথা। সুরকার, গীতিকার, শিল্পী কাউকেই কিছু দেয়া হয় না। এমনকি কাউকে কিছু জানানোও হয় না। আমাদের দেশে তো অনেক কিছুই ঘটে। এটাও তার একটি অংশ।”

কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, “বিষয়টি আসলে অপরিষ্কার। কেউ পায়, আবার কেউ পায় না। এ নিয়ে জানা-শোনার অনেক ব্যাপার রয়ে গেছে।”

শিল্পী মিলন মাহমুদ বলেন, “আমার বহু গান বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টিউন হিসেবে ব্যবহার হলেও আমি এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সম্মানী পাইনি। আর এসব নিয়ে আমি ঘাটাঘাটিও করি না। হয় তো যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে গানের অ্যালবাম বের হয়, তারা এর লভ্যাংশ নেয়। হয়তো বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অ্যালবাম করার সময়ই এগ্রিমেন্টে এসব উল্লেখ করে নেয়। আমি ঠিক জানি না কিভাবে কী হয়। তবে আমি কখনো কোনো টাকা পাইনি।”

ন্যান্সি বলেন, “আমি কোনো ধরনের টাকা পাই না। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। স্পষ্ট কথা হলো, কোনো ধরনের টাকা দেয়া হয় না। এ বিয়টি কেন হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। অথচ এটা আমাদের প্রাপ্য।”

সুরকার ও গায়ক ইবরার টিপু বলেন, “আমি এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সম্মানী পাইনি।”

তবে গায়ক তপু জানান, তিনি টাকা পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি টাকা পাই। কারণ আমার গানগুলো জি-টেকনলজির সাথে রয়্যালটির সূত্রে দেয়া আছে। সে কারণে আমি পাচ্ছি। তবে যারা এককালীনভাবে অ্যালবাম রিলিজ করে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে, তারা পায় না।”

একই কথা বললেন তরুণ গায়ক এস এ সুমন।

জনপ্রিয় গীতিকার অনুরুপ আইচ বলেন, ”আমি টাকা পাই। এটা অডিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি পেয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ গীতিকার-সুরকার-শিল্পীরা টাকা পায় না। অনেককেই ঠকানো হয়। আমি চাই সবাই তার প্রাপ্য টাকাটা যেন পায়।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে বিভিন্ন অডিও প্রতিষ্ঠান এবং এই সার্ভিস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাঝে চুক্তি হয়ে থাকে। সেই চুক্তি অনুযায়ী এদের কাছ থেকে গানগুলো সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। কিন্তু এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্পীরা টাকা পায় না।

শুধু তাই নয়, দেশের বাইরের অনেক শিল্পীর গানও কোনো ধরনের সম্মানী, এমনকি অনুমতি ছাড়াই ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সার্ভিসে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More