পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। বৈশাখ বরণে পান্তা ইলিশের জন্য দেশব্যাপী চলছে নানা আয়োজন। নববর্ষের ভোরে পান্তা ভাতের সাথে এক টুকরো ভাজা ইলিশ খেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। তাই তাজা ইলিশ পেতে বরিশাল অঞ্চলের কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকার বড় বড় ইলিশ ব্যবসায়ীরা বর্ষবরণের ৮ দিন আগেই এখানে এসেছেন ইলিশ ক্রয়ের জন্য। বৈশাখ উপলক্ষ্যে এসব ইলিশ ঢাকায় নিয়ে আরো চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বর্ষবরণের আয়োজন টের পেয়ে এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরাও হঠাৎ করে ইলিশের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বরিশালে এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। এক মাস আগে এর দাম ছিলো ৭০০ টাকা।
ইজারাদার জামাল হোসেন জানান, এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ৫০ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে।
শনিবার ভোর ৬টায় বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে ইলিশের পাইকারি দাম ছিলো প্রতি মণ (এক কেজির ওপর) ৬৫ হাজার টাকা, ৫২ হাজার টাকা এক কেজি সাইজ, ৩৭ হাজার টাকা ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম সাইজ এবং ২২ হাজার টাকা ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম সাইজ।
মৎস্য মোকামের ব্যবসায়ীরা জানান, ৮ থেকে ১০ দিন আগে ইলিশের মণ কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা কম ছিলো। ২৯ চৈত্র পর্যন্ত (১২ এপ্রিল) প্রতিদিনই ইলিশের দাম বাড়তে থাকবে। বিগত বছরে নববর্ষের একদিন আগে বরিশালের মোকামে পাইকারি বাজারে ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছিলো ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা (এক কেজির ওপর সাইজের ইলিশ)। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের দাম হয়েছিলো ৪ হাজার ৫০ টাকা।
ইলিশের এ আকাশছোঁয়া দামের কারণ সম্পর্কে বরিশাল ইলিশ মোকামের আড়তদাররা জানান, নববর্ষ যত এগিয়ে আসবে, মোকামে আমদানি তত কমবে। অন্যদিকে যে পরিমাণ মাছের আমদানি হবে তার প্রায় সবটুকুই ব্যবসায়ীরা মজুদ করছেন এবং অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাই ক্রেতারা আগাম মাছ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বেন মোকামে।
তিনি আরো জানান, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ইলিশের মণ লাখ টাকা অতিক্রম করতে পারে।
এরইমধ্যে এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকার ওপরে। নববর্ষের আগমুহূর্তে এ দর লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবী করেন জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল।
এ ব্যাপারে মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিৎ দাস পরিবর্তন‘কে জানান, এ মৌসুমে জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রতিবছরই ইলিশের আমদানি কম থাকে। তারপরও যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে তার দুই-তৃতীয়াংশ ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে চলে যায়। ঢাকার আড়তদাররাই সবচেয়ে বেশি ইলিশ মজুদ করেন। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বছরই নববর্ষের উৎসবে ইলিশ সঙ্কট দেখা দেয়।
স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্ষবরণের পাশাপাশি নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ও মাছের আমদানী বন্ধ থাকায় মূল্য বেড়েছে। ১৪ সংক্রান্তি পর্যন্ত বর্ষবরণ উপলক্ষে ইলিশের মূল্য বাড়তেই থাকবে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।
ভোজন রসিকরা তাজা ইলিশ দিয়ে বর্ষবরণের আগ্রহের কারণে প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে ইলিশের আকাল সৃষ্টি হয়। এবারো আকাল সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেভাবে ইলিশের মূল্য বাড়ছে তাতে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত মূল্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বোঝা মুশকিল।
প্রতিবছরই ঢাকার কিছু সৌখিন ক্রেতাও ইলিশ ক্রয়ের জন্য ছুটে আসেন বরিশালে। তারা টাকার দিকে তাকান না। যেকোনো মূল্যে তাজা ইলিশ ক্রয় করেন। পাইকারি ও ঢাকার সৌখিন ক্রেতাদের ভিড়ে স্থানীয় ক্রেতাদের ভাগ্যে মাছ জোটে না। নববর্ষের জন্য ইলিশের আকাশচুম্বী মূল্য হওয়ায় জাটকা শিকারেও নেমে পড়েছে কেউ কেউ। কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এক মন মাছ শিকার করতে পারলেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
পাইকারি বিক্রেতারা আরো জানিয়েছেন, জাটকা ধরা বন্ধ থাকার কারণেই ইলিশের এ অগ্নিমূল্য। তাদের বক্তব্য টাকা হলেও মাছ মিলছে না। ইলিশের মৌসুম না থাকায় মাছ ধরা পড়ছে খুবই কম। কারেন্ট জালসহ ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ। এ অবস্থায় মাছের সঙ্কট চলছে। মাছ সঙ্কটের মাঝেই এসেছে বৈশাখের চাহিদা। এসব কারণেই মাছের মূল্য বেড়েছে।