বিএনপি-জামায়াত জোটের উত্থান নিয়ে ভারতে উদ্বেগ

0

BNP Jamayatনয়া দিল্লি: বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে ভারতের জন্য সেটা একটা বিপর্যয়ের সামিল হবে বলে খোলাখুলি স্বীকার করে নিয়েছেন অন্তত দু’জন প্রভাবশালী সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক।

ভারতীয় পার্লামেন্টের সরকারি টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত এক বিতর্কে অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত জে সি শর্মা ও জয়ন্ত প্রসাদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ঢাকার ক্ষমতায় ফিরলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির যেমন ফের বাড়বাড়ন্ত হতে পারে – তেমনি বিপন্ন হতে পারে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাও।

সরকারিভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান হল, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যারাই নির্বাচিত হয়ে আসুন – ভারত তাদেরকেই স্বাগত জানাবে।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতি আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে- এ কথাও প্রকাশ্যে তারা কখনোই মানেন না।

তবে এ সপ্তাহে ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার টিভি-চ্যানেলে দেশের দু’জন প্রভাবশালী সাবেক কূটনীতিক সরাসরি বলেছেন- বিএনপি ও ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় ফিরলে ভারতের দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত জে সি শর্মা –যিনি একাত্তরের যুদ্ধেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে লড়েছেন – তিনি বলছেন, “এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো বিএনপি ভোটে আসবে কি না –এবং যেহেতু ক্ষমতার পালাবদলটা বাংলাদেশে প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেক্ষেত্রে তারাই ক্ষমতায় আসবে।”

মি. শর্মা সেই সঙ্গে যোগ করছেন, “সেই সরকারকে কিন্তু ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে খুব সংবেদনশীল হতে হবে, এবং বিএনপি-র পুরনো রেকর্ডের কথা মাথায় রাখলে বলতেই হবে তাতে ভারতের গুরুতর উদ্বেগের কারণ আছে।”

অ্যাম্বাসেডর জয়ন্ত প্রসাদ আবার আঙুল তুলছেন বিএনপি-র জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর দিকে।

তিনি বলছেন, ভারতের জন্য মূল সমস্যা হলো বাংলাদেশের এই ইসলামপন্থী শক্তিরাই!

তার কথায়, এই শক্তিগুলোর দাপটে গোটা বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান হলো, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যারাই নির্বাচিত হয়ে আসুন – ভারত তাদেরকেই স্বাগত জানাবে

এদের উসকানিতে সে দেশের মুসলিম জনসংখ্যার ওপর তো প্রভাব পড়ছেই, পাশাপাশি সংখ্যালঘু হিন্দুরা বা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা-মগ-ত্রিপুরী বা খ্রিষ্টান সবাইকেই সেই ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় ফিরলে বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা দলে দলে ভারতে আসার চেষ্টা করবেন – সাউথ ব্লকে সেই আশঙ্কাও এখন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

পাশাপাশি অ্যাম্বাসেডর জে সি শর্মা বলছেন, বাংলাদেশ যদি তাদের পুরনো নীতিতে ফেরে সেটা হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য সর্বনাশ।

তার কথায়, “ভারতের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি হল –যদি সে দেশের সরকার আবার আগের মতো পরেশ বড়ুয়া এবং আলফা-সহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের মদত দিতে শুরু করে এবং গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। সেটাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা।”

বস্তুত গত কয়েক বছরে ভারত বাংলাদেশে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতার জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে – এবং বিনিময়ে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ কিংবা যোগাযোগের সুবিধা, অর্থাৎ কানেক্টিভিটি পাচ্ছে – তার সবটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের নতুন সরকার যদি ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন না-হয়।

জয়ন্ত প্রসাদ আরো বলছিলেন, ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে স্রেফ বাংলাদেশ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ায়।

এখন এই ধরনের সহযোগিতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকে, না কি আবার আগের মতো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ঘিরে ফেলে সন্দেহ আর অবিশ্বাস – সেই আশঙ্কা নিয়েই ভারত এখন নজর রাখছে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিস্থিতির দিকে। সূত্র: বিবিসি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More