মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী সব সড়কই ঝুঁকিপূর্ণ

0

1408470377.রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা হাজারিবাগ, হাতিরপুল, কলাবাগান, কাটাসুর, শ্যামলী, টেনারি মোড়ের আশপাশের এলাকা ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার রাস্তাগুলো বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সব সড়কই ঝুঁকিপূর্ণ।
মোহাম্মদপুর রিং রোডের শ্যামলী অংশের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে এবড়োথেবড়ো হয়ে আছে। মেরামতের উদ্যোগ নেই। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে ছোট খাট ডোবার অবস্থা ধারণ করে। আড়ংয়ের পেছনের এলাকায় ওয়াসার উন্নয়নকাজের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করার পর সেখানকার অবস্থাও বেশ নাজুক। যানবাহনে চলতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। রাজধানীর আসাদগেট থেকে শুক্রাবাদ মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়ের বাজার, একই এলাকা থেকে শিয়া মসজিদ এলাকার সড়কগুলোর অবস্থাও একই রকম। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। ভাঙাচোরা এ রাস্তায় পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় গর্তে পড়ে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, হাজারিবাগ, টেনারি মোড়ের আশপাশের এলাকা ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার রাস্তাগুলো ঘুরে একই ধরনের সমস্যা দেখা গেছে। প্রধান সড়কের বাইরে বিশেষ করে মহলার সড়কগুলোর অবস্থা অনেকটাই নাজুক। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। তাদের মতে, জনপ্রতিনিধি না থাকায় এ ধরনের উন্নয়নকাজের দিকে কারও কোনো নজর নেই।
বড় বড় গর্তের কারণে এসব রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে চরম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবার রোদ উঠলে ধুলা বালির জন্য রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। উচু নিচু রাস্তায় পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দের। এ রাস্তায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। রাস্তার উপর যখন তখন বিকল হয়ে পড়ছে যানবাহন। অফিস আদালতে যাতায়াতকারি অনেকেরই খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পড়ে পোশাক-পরিচ্ছেদ নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ আবার আহতও হচ্ছে। এমন রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা হাজারিবাগ, হাতিরপুল, কলাবাগান, কাটাসুর, শ্যামলী, টেনারি মোড়ের আশপাশের এলাকা ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর আসাদগেট, মোহাম্মদপুর এলাকার ইকবাল রোড, তাজমহল রোড, ধানম-ি, জিগাতলা ইত্যাদি এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বেশি হয়ে থাকে। জিগাতলা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান বলেন, প্রতি বছরই মার্চ মাস থেকে রাস্তা কাটাকাটি শুরু হয়। বিনা নোটিশেই হঠাৎ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়ে যায়। কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতির সুযোগ তো দেয়ই না। আবার কখনও কখনও দেখা যায় রাস্তা কাটার কাজ কিছু অংশ এগিয়ে কিংবা অর্ধেক কাটার পর হঠাৎ কাজ থামিয়ে দেয়া হয়। সে রাস্তা ওভাবেই পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নগরবাসীকে পানির কষ্ট থেকে মুক্ত রাখতে ভূ-গর্ভস্থ পানির পাইপ কিংবা স্যুয়ারেজ লাইনগুলো মেরামতের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। কখনও কখনও হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজারের গাফিলতি অথবা কন্ট্রাক্টরের পাওনা পরিশোধে বিলম্বের কারণে কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে থাকে। আবার একই স্থানে একসঙ্গে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। যেমন ডেসকো ও ওয়াসার খননকাজের কারণে কোনো এলাকায় সারা বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে। আবার কখনও কখনও খননকাজে অংশ নিয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসদাতা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, বিটিসিএল ইত্যাদি কোম্পানি।
জিগাতলার পুরান কাঁচাবাজার সংলগ্ন প্রধান রাস্তাটির কাটাকাটির কাজ হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। এ রাস্তাটির অবস্থা এখন এতই বেহাল, যা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ রাস্তাটির একটি অংশ চলে গেছে ধানম-ির দিকে। যেটির অবস্থা আরও খারাপ। এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী কলেজ ছাত্র মোহাম্মদ খোরশেদুল আলম জানান, ক’দিন পরপরই এলাকার কোনো না কোনো রাস্তা কাটা হয়। এ কারণে এসব রাস্তায় সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগেই থাকে।
নীলক্ষেত ফুটপাতের বইয়ের দোকান সরিয়ে, জনসাধারণের চলাচল প্রায় বন্ধ করে স্যুয়ারেজের লাইন বসানোর কাজ হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। নীলক্ষেত সিগন্যালের রাস্তা থেকে শুরু করে নীলক্ষেত থানা পর্যন্ত ফুটপাতে এ কাজ চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সোনিয়া জানান, ফটোকপি, কাগজ-কলমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন কেনাকাটার জন্য আমাদেরকে নীলক্ষেতে আসতে হয়। কিন্তু বৃষ্টির দিনে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এখান দিয়ে চলাফেরা করতে দুর্ভোগের আর শেষ নেই।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য কেন বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়া হয়, এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়ার পেছনে হয়তো জনগণের সুবিদা-অসুবিধার চেয়ে ঠিকাদার তার কাজ ঝুলিয়ে রেখে অধিক মুনাফা আদায়ের সুবিদা পেয়ে থাকেন। এছাড়া অনেক বিদেশি কোম্পানিকেও এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এসব খোঁড়াখুঁড়ি কাজ হতে হবে পরিকল্পিত ও অবশ্যই শুষ্ক মৌসুমে। তার মতে, বর্ষাকাল কখনই এসব কাজের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসি’র প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিসিসি’র দুই অংশেই অল্প সময়ের জন্য প্রশাসক দায়িত্ব পান। সিটি কর্পোরেশন ভাগ করার পর থেকেই দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া যাচ্ছে না। ডিসিসি’র প্রশাসকরা মাত্র ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব পান বলে রুটিন কাজের বাইরে তেমন কোনো উন্নয়নকাজে হাত দেন না। তাহলে উন্নয়ন কাজ কিভাবে হয় তার উল্টো প্রশ্ন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More