সমাজকল্যাণমন্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীনঃ সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের মন্তব্য

0

1_133146একের পর এক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীর বেফাঁস কথা আর কাজে চারদিকে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সর্বশেষ শনিবার সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করায় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা তাকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন। রোববার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। এছাড়া তার পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এর আগে শনিবার বিকালে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের ‘খবিস’, চরিত্রহীন বলে গালিগালাজ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক তার প্রতিবাদ করে অনুষ্ঠান বর্জন করেন। মন্ত্রীর বেফাঁস কথাবার্তায় রোববার দুঃখ প্রকাশ করে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন আদিবাসী উদযাপন কমিটির নেতারা।
রাজধানীতে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর গালিগালাজের প্রতিবাদে সমাবেশ করে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠনের নেতারা। প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী যেভাবে গালাগাল করেছেন তাতে এই মন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলতে থাকবে বলে হুমকি দেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে ‘ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সম্মান রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তার এই গালিগালাজের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় মানুষ বলে দাবিদার একজন মন্ত্রীর পক্ষে সিলেটে প্রকাশ্য সভায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ অগ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এই মন্ত্রী যেসব অগ্রহণযোগ্য তথ্য দিয়েছেন সে ব্যপারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। আর ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে এই মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় রাখা উচিত নয় বলেও এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন বি. চৌধুরী।
সিলেটে মানববন্ধন : সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অশালীন ও অশ্রাব্য বক্তব্যের প্রতিবাদে রোববার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, মন্ত্রীর এমন আচরণ মানসিক বিকৃতির পরিচয়। অবিলম্বে মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বরখাস্ত করার দাবি জানান তারা। অন্যথায় সারা দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন সাংবাদিকরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, শেখ আশরাফুল আলম নাসির, ইকরামূল কবীর ইকু প্রমুখ।
এদিকে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব মন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্য ভারসাম্যহীন। তিনি নিজ কন্যাকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে উপর দিকে থু থু দিয়েছেন। এমন অশালীন বক্তব্য শুধু সাংবাদিক সমাজকে নয়, গোটা সভ্য সমাজকে লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে।
অপর এক বিবৃতিতে সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক সমাজ সম্পর্কে মন্ত্রী যেভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা অনভিপ্রেত এবং অনাকাক্সিক্ষত। সিলেট প্রেস ক্লাব ফাউন্ডেশনের সভাপতি আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান আহমদ এক বিবৃতিতে মন্ত্রীর এ ধরনের দায়িত্বহীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
সিলেটে কর্মরত টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইমজার নেতারা শনিবার রাতে এক জরুরি সভায় মন্ত্রীর অশালীন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন এনটিভির সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মঈনুল হক বুলবুল, দেশ টেলিভিশনের বিভাগীয় প্রতিনিধি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন, এসএ টিভির ব্যুরো প্রধান আবদুল আলীম শাহ, চ্যানেল এস-এর স্টাফ রিপোর্টার সজল ছত্রী, চ্যানেল নাইন-এর স্টাফ রিপোর্টার দেবাশীষ দেবু, যমুনা টিভির রিপোর্টার প্রত্যুষ তালুকদার প্রমুখ। অপরদিকে দক্ষিণ সুরমা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গির আলম মুসিক ও সাধারণ সম্পাদক আজমল খান, বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ জামালউদ্দিন এবং অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেট (ওজাস) অনুরূপ পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আয়োজক আদিবাসী সংগঠনের দুঃখ প্রকাশ : সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির নেতারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সাংবাদিকদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে দিবসটির আয়োজক কমিটির কারও কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। মন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে নেই আয়োজকদের কেউ। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আয়োজক কমিটি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা অনুরোধ জানিয়েছেন, এমন ঘটনার জন্য আয়োজকদের ভুল না বোঝার। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন, সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শ্রীগৌরাঙ্গ পাত্র ও সদস্য সচিব বণিফাস খোংলা।
বগুড়ায় সাংবাদিক সমাবেশ : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব এমএ আজিজ সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করে বলেছেন, একজন চরিত্রহীন, মাতাল, লম্পটকে শেখ হাসিনা মন্ত্রী করেছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ওই মন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে নইলে আমরা দেখে নেব। কেউ সাংবাদিকদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে পার পায়নি; তিনিও পাবেন না। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবি করে তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা হচ্ছে।
রোববার সকালে বগুড়া প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়া আয়োজিত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এমআর সাইনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএফইউজে সহকারী মহাসচিব মীর্জা সেলিম রেজা, প্রচার সম্পাদক আবু ইউসুফ, বগুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের জেলা আহ্বায়ক ডা. মাইনুল হাসান সাদিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More