সহিংসতার ছক জামায়াত-শিবিরের!

0

jammat-shibir-introজামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে বরিশালে সহিংসতার ছক এঁকেছে জামায়াত-শিবির। সে অনুযায়ী সংগঠনটির বরিশালের কর্মীরা অনলাইনে পরিকল্পিত প্রচারণায়ও নেমেছে।

প্রচারণাকে জামায়াত-শিবির ‘সাইবার যুদ্ধ’ বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে। প্রচারণার কাজে নিয়োজিতদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন বরিশাল শহরের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। ফেসবুক অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এদের মধ্যে অনেকেরই পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সূত্রমতে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় অপেক্ষমান। যে কোনোদিন এ চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রায়ের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউব ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তুলে ধরা হচ্ছে রায় নিয়ে নানা কল্পকাহিনী।

সাঈদীর বিরুদ্ধে যে কয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং যে দুটি অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হচ্ছে। রায় পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বরিশালের প্রতিটি থানা, উপজেলা ও জোন পর্যায়ে আইটি এক্সপার্টদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে আইটি টিম। প্রায় দেড় থেকে দু’শ জন শিবিরকর্মী এসব প্রচারের সাথে জড়িত রয়েছে। এরা অনেকেই নামে বেনামের ফেসবুক আইডির মাধ্যমেও উস্কানি দিয়ে আসছে।

জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তার প্রোফাইলে সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে একটি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাঈদীর ফাঁসির রায় বহাল রাখা হলে গোটা বরিশাল শহর অচল করে দিতে। এজন্য যতো টাকা প্রয়োজন তিনি দিবেন।

জাকির হোসেনের প্রোফাইলে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘ ১২বছর ধরে শিবিরে যুক্ত ছিলেন। উদারহণ হিসেবে তিনি ফেসবুকের প্রোফাইলে শিবিরের কাজ কারার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।

হাবিবুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি ৫ মে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, যদি সাঈদীর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখা হয় তাহলে বরিশাল জেলাকে অচল করে দেয়া হবে। পাশাপাশি গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে দেশকে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়। এজন্য শিবিরকে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা দরকার তিনি দিবেন বলেও উল্লেখ করেন।

আব্দুল্লাহ আসাদ নামের এক ব্যক্তি টুইটারে একটি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ”যদি কাদের মোল্লার মতো আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করা হয়, তবে পুরো বরিশাল জ্বালিয়ে দেয়া হবে।” একাজে ব্যবহারের জন্য যে বোমা তৈরি করা হবে তার টাকা তিনি দিবেন। এক্ষেত্রে তিনি বরিশালবাসীর কাছে সার্বিক সহযোগিতাও চেয়েছেন।

আব্দুর রহিম নামের আরেক ব্যক্তির ফেসবুকার পোস্ট করেছেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে। আপনি প্রস্তুত আছেন তো? আমি কিন্তু কারো নির্দেশের অপেক্ষায় নয়, নিজেই সর্বক্ষণ প্রস্তুত আছি। এবার হবে টার্গেটভিত্তিক আন্দোলন।’

বরিশাল শিবিরের মাঠ পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনলাইন বা সাইবার যুদ্ধ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। তাই মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের জোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও জোন পর্যায়ে আইটি টিম গঠন করা হয়েছে। এরা যেকোনো বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনাসহ যেকোনো তথ্য দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবির সমর্থক হলেও যাদের ফেসবুক আইডি নেই তাদের কর্মী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে না।

শিবিরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর্মী শিবিরের যেকোনো কার্যক্রমের বিষয়ে অনলাইনে সক্রিয় থাকেন। একযোগে যে কোনো তথ্য ছড়ানোর পর মাঠ পর্যায়েও ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারেন তারা। এজন্যই সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে রাজপথ দখলের আগেই অনলাইনে প্রভাব বিস্তারের কাজ করছেন তারা।

এছাড়াও রায়কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদস্বরূপ শিবির কর্মীদের ফেসবুকের প্রোফাইলে সাঈদীর ছবি ব্যবহার করা ‘ফরজ’ করে দিয়েছে শিবিরের হাই কমান্ড। সে অনুপাতেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিবির কর্মীরা।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, সাঈদীর আপিলের রায় নিয়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশালে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে প্রথম রয়েছে ‘সাইবার যুদ্ধ’। কারণ এ যুদ্ধে ঝুঁকির কোনো সম্ভাবনা নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাইবার যুদ্ধের প্রফিট হচ্ছে- অতি সহজেই আমজনতাকে ভুলভাল বুঝিয়ে দেশজুড়ে একযোগে নাশকতা চালানো। এজন্য কতিপয় সাবেক শিবির কর্মীরা বর্তমানে নামেমাত্র আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ফেসবুকের মাধ্যমেও নানা উস্কানি দেয়া অব্যাহত রেখেছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আব্দুর রউফ খান জানান, সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের অপ্রচার চালানো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বরিশালের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসবের সাথে জড়িতদের ধরতে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম কাজ করছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More