খুশি মনে স্ত্রীদের দেনমোহর আদায় করতে হবে অন্যথায় কোরআন যা বলেছে

0

Muslim৪. আর তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো। – সুরা আন-নিসা

তাফসির : তৃতীয় আয়াতে একাধিক স্ত্রীর বেলায় স্ত্রীদের প্রতি অনুষ্ঠিত সম্ভাব্য নির্যাতনের পথ বন্ধ করা হয়েছিল। এ আয়াতে নারীদের একটা বিশেষ হক বা অধিকারের কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে যেসব জুলুম-নির্যাতন হতে পারত, তা দূর করা হয়েছে। সে অধিকার হচ্ছে স্ত্রীর দেনমোহর। স্ত্রীদের মোহরের ব্যাপারে তখনকার দিনে অনেক ধরনের অবিচার ও জুলুমের পন্থা প্রচলিত ছিল।
এক. স্ত্রীর প্রাপ্য মোহর তার হাতে পৌঁছত না; মেয়ের অভিভাবকরাই তা আদায় করে আত্মসাৎ করত, যা ছিল একটা ভীষণ নির্যাতনমূলক রেওয়াজ। এ প্রথা উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কোরআন নির্দেশ দিয়েছে, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে।’ এতে স্বামীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে স্ত্রীর মোহর তাকেই পরিশোধ করো, অন্যকে নয়। অন্যদিকে অভিভাবকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মোহর আদায় হলে তা যার প্রাপ্য তার হাতেই অর্পণ করো। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ যেন তা খরচ না করে।
দুই. স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে নানা রকম তিক্ততার সৃষ্টি হতো। প্রথমত, মোহর পরিশোধ করতে হলে মনে করা হতো যেন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। এ অনাচার রোধ করার লক্ষ্যেই আয়াতে ‘নাহলাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে অত্যন্ত হৃষ্টমনে তা পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা অভিধানে ‘নাহলাহ’ হলো ‘অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রদান করা’। মোটকথা, ‘স্ত্রীর মোহরের ঋণ হৃষ্টচিত্তে, উদার মনে পরিশোধ করা কর্তব্য।’
তিন. অনেক স্বামীই তার বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় ভেবে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মোহর মাফ করিয়ে নিত। এভাবে মাফ করিয়ে নিলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা মাফ হতো না। অথচ স্বামী মনে করত যে মৌখিকভাবে যখন স্বীকার করিয়ে নেওয়া গেছে, সুতরাং মোহরের ঋণ মাফ হয়ে গেছে। এ ধরনের জুলুম প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মোহরের কোনো অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবেই তোমরা তা হৃষ্টমনে ভোগ করতে পারো।’ অর্থাৎ চাপ প্রয়োগে কিংবা কোনো প্রকার জোর করে ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার অর্থ কোনো অবস্থায়ই ক্ষমা নয়। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায়, খুশিমনে মোহরের অংশবিশেষ মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরিই বুঝে নিয়ে কোনো অংশ তোমাদের ফিরিয়ে দেয়, তবেই কেবল তা তোমাদের পক্ষে ভোগ করা জায়েজ হবে।
এ ধরনের নির্যাতনমূলক প্রথা জাহেলিয়াত যুগে প্রচলিত ছিল। কোরআন এসব জুলুমের উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজও মুসলিম সমাজে মোহর সম্পর্কিত এ ধরনের নানা নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত দেখা যায়। কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী এরূপ নির্যাতনমূলক পথ পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আয়াতে হৃষ্টচিত্তে প্রদানের শর্ত আরোপ করার পেছনে গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। কেননা মোহর স্ত্রীর অধিকার এবং তার নিজস্ব সম্পদ। হৃষ্টচিত্তে যদি সে তা কাউকে না দেয় বা দাবি ত্যাগ না করে, তবে স্বামী বা অভিভাবকের পক্ষে সে সম্পদ কোনো অবস্থায়ই হালাল হবে না। হুজুর (সা.) নিম্নোক্ত হাদিসে শরিয়তের মূল নীতিরূপে ইরশাদ করেছেন, ‘সাবধান! জুলুম কোরো না। মনে রেখো, কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা হালাল হবে না।’ (মিশকাত, পৃ. ২৫৫) এ হাদিসটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির নির্দেশ দেয়, যা সর্বপ্রকার প্রাপ্য ও লেনদেনের ব্যাপারে হালাল এবং হারামের সীমারেখা নির্দেশ করে।
আজকালকার যুগে স্ত্রীরা যেহেতু মনে করে যে স্বাভাবিকভাবে মোহর তো পাওয়া যাবেই না, বরং দাবি করলে তিক্ততা, এমনকি সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফাটল সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র নয়, তাই তারা মোহরের দাবি মাফ করে দিয়ে থাকে। এ ধরনের ক্ষমার দ্বারা কিন্তু মোহরের ঋণ মাফ হয় না।
তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে

– See more at: http://www.eurobdnews.com/bangladeshi-local-news/2014/09/08/70747#sthash.I541gOjg.kAB9fSVG.dpuf

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More