বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের লাঠিয়াল পুলিশ ও জঙ্গি আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পদযাত্রায় জঙ্গি ছাত্রলীগের ধাওয়া ও বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের হামলার চিত্র তুলে ধরা হলো-
বাগেরহাট:
বাগেরহাটে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাসহ ৪০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে। শনিবার সকালে বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জ, পুরাতন বাজার, থানার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে ২০-২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটকদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহেদ আলী রবি, যুবদল নেতা সোহেল তরফদার, কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজরা আসাদুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, বাবু মোল্লা রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ৯টার দিকে শহরের মুনিগঞ্জ এলাকার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের বাড়ির কাছ থেকে পদযাত্রা শুরু করে পুরাতন বাজারের দিকে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তারা ফিরে যাওয়ার চেষ্টা কালে পুলিশ প্রথমে তাদের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং পরে নেতাকর্মীদের আটক শুরু করে। কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীমসহ কয়েক জন নেতা এসময় এম এ সালামের বাড়িতে আশ্রয় নিলে পুলিশ সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
অপরদিকে শহরের পুরাতন বাজার এবং লিচুতলা সংলগ্ন থানার মোড় এলাকার জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিমসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের বাধায় শহরে এরপর আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে সদর মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাদের আটক করে।
তবে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন শহরের বিভিন্ন এলাকায় শান্তি সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও মোটর শোভাযাত্রা করেছে।
পিরোজপুর:
পুলিশি বাধার মুখে পিরোজপুরে জেলা বিএনপির পদযাত্রা পণ্ড হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে পদযাত্রা বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে পিরোজপুর জেলা বিএনপি’র পদযাত্রা শুরু করে। পরে টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে এক পথসভায় মিলিত হয় বিএনপি।
পদযাত্রায় জেলা, পৌরসভা, বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
রাজবাড়ী:
রাজবাড়ীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বাধা পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যায়।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ফিরে যায়।
নীলফামারী:
অপরদিকে নীলফামারীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা পৌর সুপার মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রার ডাক দেয় বিএনপি। একই স্থানের বিপরীত পাশে শান্তি সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এগিয়ে আসে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরে বিএনপির মঞ্চ ভাঙচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে উল্লাস করে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল শাহ আপেল বলেন, কর্মসূচির নামে বিএনপি দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ায় আমরা বাধা দেই। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে মাত্র।
জেলা বিএনপির সভাপতি আ ক ম আলমগীর সরকার বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হঠাৎ ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে মঞ্চ দখল করে আনন্দ-উল্লাস করে। এ ছাড়াও আমাদের কর্মসূচির ব্যানার ছিড়ে ১৫ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। অথচ ঘটনাস্থলে পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নাটোর:
এ দিকে নাটোর জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কার্যালয়কে লক্ষ্য করে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। তবে কেউ হতাহত হননি। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় শহরের আলাইপুরস্থ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আলাইপুর কার্যালয়ের সামনে একদল যুবক পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। এ সময় কার্যালয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, শান্তি সমাবেশের নামে দেশব্যাপী বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার জন্যই আওয়ামী লীগ এ হামলা চালিয়েছে। তারা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, শহরে দুই দলের কর্মসূচি চলাকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়। কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হয়নি।
সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জে কাছাকাছি স্থানে বড় শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কর্মসূচিতে জমায়েত বাড়ানোর চেষ্টা থাকলেও সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা ছিল দুই পক্ষেরই। বিএনপির জমায়েতের পাশ দিয়ে আওয়ামী লীগের খণ্ড খণ্ড মিছিল গেছে, আবার আওয়ামী লীগের জমায়েতের পাশ দিয়ে এসেছে বিএনপির খণ্ড মিছিল।
দুই পক্ষের কর্মসূচি চলাকালে পুরাতন বাসস্টেশন থেকে চাঁদনীঘাট এবং স্টেশন রোডের সদর থানার সামনে অংশ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই পুরাতন বাসস্টেশনে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির গণজমায়েতে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে। সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে জেলা সদরে পদযাত্রার এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির বেশির ভাগ এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মিছিল নিয়ে আসে বিএনপির।
ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশেও যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের সমাবেশের আয়োজন ছিল শহরের কেন্দ্রস্থল আলফাত স্কয়ারে। এখানকার সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মিছিল ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন। দিরাই, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা থেকে মিছিল এসে যোগ দেয় সমাবেশে।