চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ২৫ বছরের জন্য আদানি পাওয়ারের করের বোঝা বহন করবে, যে বোঝা কোম্পানিটি ভারত সরকারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ছাড় পেয়েছে।
লাভের ভাগ গৌতম আদানির আর লোকসানটা বাংলাদেশের—ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিটিকে এক কথায় এভাবেই বলা যেতে পারে।
আদানির সঙ্গে হওয়া এই চুক্তিটি সরকারিভাবে গোপন রাখা হলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কেউ কেউ এটি গণমাধ্যমকে দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি নিউজ পোর্টালও এটি প্রকাশ করেছে।
‘চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল, একপেশে এবং বাংলাদেশের জনগণের টাকায় এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনীর পকেট ভরার চুক্তি,’ এমন বিশ্লেষণ সিডনিভিত্তিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির, যিনি এই খাতে ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন।
দ্য ডেইলি স্টারের সংগ্রহ করা চুক্তিটি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনে বা না জেনেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমন একটি চুক্তি সই করেছে, যেখান থেকে আদানি পাওয়ার কয়লা ক্রয় থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ রপ্তানি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ‘অতিরিক্ত’ লাভ করার সুযোগ পাবে। এমনকি আদানি যদি চুক্তির কোনো শর্ত না মানে, তবু বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
এছাড়া, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ২৫ বছরের জন্য আদানি পাওয়ারের করের বোঝা বহন করবে, যে বোঝা ভারতীয় কোম্পানিটি তার সরকারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ছাড় পেয়েছে। অর্থাৎ চুক্তিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে আদানি তার সরকারকে ট্যাক্স দেবে না, কিন্তু সেই ট্যাক্সের টাকা চুক্তিতে আগে থেকে যোগ করা ছিল বলে বাংলাদেশকে দিয়ে যেতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ২০১৯ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ঘোষণা করার কারণে চুক্তির ২৫ বছরে শুধু ক্লিন এনার্জি সেস (কার্বন নিঃসরণের বিপরীতে প্রদেয় এক ধরনের কর) থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে।
এটা কেবল এক ধরনের কর থেকে বাড়তি আয়। আদানি বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানিমুখী বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় কর ছাড়সহ অগণিত সুবিধা পাবে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খরচ কমিয়ে ফেলতে পারবে।
টিম বাকলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কর ছাড়ের কারণে আদানির ১ বিলিয়ন ডলারের অনেক বেশি টাকা বেঁচে যাবে। যেমন, আদানি চীন থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানির জন্য কর ছাড় থেকে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। কিন্তু এই টাকা তারা ঠিকই বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। এতে আদানির পুরোই লাভ।’
অবশ্য, কর ছাড়ের টাকায় বাংলাদেশের ভাগ না পাওয়ার বিষয়টি আদানি পাওয়ারের কাছে ‘ব্যবসা’। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদানির একজন মুখপাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চুক্তিটি সই হওয়ার সময় তো আমরা জানতাম না যে করের পরিমাণ কমবে। এটা তো আমরা আমাদের ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে ছাড় আদায় করেছি। এটা তো আমাদের লাভ।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো কারণে আমাদের বাড়তি কর দিতে হতো, সেটা তো আমরা পিডিবির ওপর চাপাতাম না। আমরা কত টাকা খরচ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করব, সেটা আগে থেকেই নির্দিষ্ট। তাই ওই টাকাটা থেকে যত কম খরচে বানানো যাবে, সেটা আমাদের আয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদানির চুক্তি পর্যালোচনা করে এক আইনজীবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চুক্তিটি যদি ন্যায্য হতো, তবে আদানির কর সুবিধার বেঁচে যাওয়া টাকার একটা অংশ বাংলাদেশও পেত।’
যদিও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত প্রশ্নের জবাবে আদানির অন্য একজন মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশকে কর ছাড়ের টাকা দিতে হবে না।’
টিম বাকলি জানান, কর ও শুল্ক ছাড়াও চুক্তির মূল শর্তে বলা হয়েছে, যে কোনো কারণে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ না কিনলেও, বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) বাবদ বছরে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে।
তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন আন্দোলনের পরিচিত মুখ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, এটি কোনো চুক্তি নয়, বরং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদানিকে বাংলাদেশের দেওয়া উপহার।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যায্য চুক্তির দিক থেকে সব রেকর্ড ভেঙেছে আদানির এই চুক্তি।’
আদানির সম্ভাব্য চুক্তি লঙ্ঘন
২০১৭ সালে চুক্তি সই করার সময় আদানি পাওয়ার বিভিন্ন কর অনুমান করে একটি টাকার অংক নির্ধারণ করে, যা পরবর্তী ২৫ বছরে বাংলাদেশ তাদের পরিশোধ করবে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ শতাংশ আবগারি শুল্ক, ১৫ শতাংশ পরিষেবা কর, ভ্যাট ও ভারতে প্রদেয় আয়কর।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নীতিমালা সংশোধন করে আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়, যে ধরনের সুবিধা এর আগে কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়নি।
ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সরকারি নথি অনুসারে, শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে বলে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, এই বিদ্যুৎ যদি যদি বাংলাদেশে রপ্তানি না হতো তাহলে আদানি কর ছাড় পেত না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এসইজেড হিসেবে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্ক, রাষ্ট্রীয় পণ্য ও পরিষেবা করের ক্ষেত্রে আদানির বেশিরভাগ ব্যয়, প্রথম ৫ বছরের জন্য আয়করের শতভাগ মওকুফ করা হয়েছে।
চুক্তির ১৩ ডি (আই) ধারা অনুযায়ী, যে ধরনের কর প্রাথমিকভাবে দিতে হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, তার কোনো পরিবর্তন হলে তা পিডিবিকে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে। চুক্তির আরেকটি ধারায় সেই পরিবর্তিত ধারণার হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখও আছে। কিন্তু একইসঙ্গে আছে আরেকটি আইনি বাধা।
‘সংবেদনশীল তথ্য’ বলে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেছেন, এসইজেড ঘোষণার প্রায় ৪ বছর পরেও ঠিক কত টাকা বেঁচে গেছে সে সম্পর্কে আদানি পিডিবিকে লিখিতভাবে জানায়নি।
বাংলাদেশের চুক্তি আইন ১৮৭২ অনুযায়ী, আদানির তথ্য গোপন করা চুক্তিভঙ্গের শামিল।
সারা বিশ্বে আদানি গ্রুপের অন্যায় কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি করা বব ব্রাউন ফাউন্ডেশনের অলাভজনক প্রকল্প আদানিওয়াচের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এখানে চুক্তিভঙ্গ হয়েছে এবং চুক্তিটি আইনত অকার্যকর কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷
চুক্তির সাধারণ নিয়ম অনুসারে, চুক্তিভঙ্গ হলে নির্দোষ পক্ষের জন্য (এক্ষেত্রে পিডিবি) ২টি বিকল্প থাকবে। একটি ক্ষতিপূরণ দাবি, অন্যটি চুক্তি বাতিল।
কিন্তু মজার ব্যাপারটি এখানেই। চুক্তির একটি অস্বাভাবিক ধারার কারণে এই চুক্তিভঙ্গের ফলে পিডিবি চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে না।
৪.২ (এল) ধারা অনুযায়ী, পিডিবি তখনই কেবল ‘নোটিশ অব ডিফল্ট’ জারি করতে পারবে, যদি চুক্তিভঙ্গের কারণে কোম্পানির কোনো ক্ষতি হয় বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।
যেহেতু কর ছাড় থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থের পরিমাণ গোপন করা আদানির উৎপাদন সক্ষমতাকে বাধা দেয় না, তাই এ ধরনের কাজের জন্য আগামী ২৫ বছর বাংলাদেশ চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা রাখে না।
নথি অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে এই ধারাটি ব্যবহার করা হয়নি।
তবে আদানি পাওয়ার কর ছাড়ের বিষয়ে পিডিবিকে জানিয়েছিল বলে দাবি করেছেন আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র।
ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তাকে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করার অনুরোধ করা হলে তিনি ‘ব্যবসায়িক গোপনীয় নথি’ বিধায় অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা পিডিবিকে জিজ্ঞেস করুন। গত ৫ বছরে আমরা যেসব চিঠি পাঠিয়েছি, সেগুলো যদি তারা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তবে তাদের কাছে প্রমাণ থাকা উচিত।’
আদানির মুখপাত্রের দাবি, আদানির বিদ্যুতের খরচ বেশি হবে, এর কোনো ভিত্তি নেই। ‘আমরা তো এখন পর্যন্ত কোনো ইনভয়েস ইস্যু করি নি। কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু হলে ইনভয়েস দেওয়া হবে। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে আমাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ কত। আমাদের হিসাবে, এটা হবে বাংলাদেশের যে কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে কম।’
কর ছাড়ের সুবিধা না দিয়ে আদানির বাড়তি লাভ
কারমাইকেল কয়লাখনি (অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কয়লার খনি, যেখানে অধিক ছাইসহ কম শক্তির কয়লা উত্পাদন করা হয়), কয়লা বন্দর, রেললাইন, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং তাদের মালিকানাধীন ট্রান্সমিশন লাইনের কিছু অংশ— চুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে গৌতম আদানি বেশি মুনাফা করবে।
টিম বাকলির মতে, চুক্তিটি ‘কস্ট প্লাস প্লাস’। এটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন আদানির আরও বেশি লাভ নিশ্চিত হয় এবং বাংলাদেশ সেই লাভের ছোট একটি অংশও না পায়।
চুক্তির বিভিন্ন ধারায় আদানি পিডিবির সামনে মুলা ঝুলিয়েছে এবং পরের ধারাতেই তা কেড়ে নিয়েছে।
যেমন, চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে কর ছাড় পেলে ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো হবে। ১৩ (ডি)(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘বাণিজ্যিক কার্যক্রমের তারিখ অনুযায়ী কর অনুমানের পরিবর্তনের ফলে এককালীন চার্জ বা ব্যয়ে (বা চার্জ বা ব্যয়ের এককালীন বৃদ্ধি বা হ্রাস) সমন্বয় হবে ক্যাপাসিটি চার্জের মধ্যে।’
এমনটাই তো হওয়া উচিত।
কিন্তু চুক্তির এই ধারায় যে ন্যায্যতার কথা বলা হয়েছে, ঠিক পরের ধারাতেই (৫) বলা হয়েছে, ‘উভয়পক্ষ এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে যে, প্রাথমিক কর অনুমানের কোনো পরিবর্তনের কারণে কোনো ধরনের সমন্বয় হবে না… যতক্ষণ না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়।’
চুক্তিটি পর্যালোচনাকারী আইনজীবী বলছেন, চুক্তির ১৩ ধারার মূল বক্তব্য হচ্ছে কর অনুমানের যে কোনো পরিবর্তন যদি পিডিবির পক্ষে যায়, তাহলে কোনো সমন্বয় হবে না। এটা নিঃসন্দেহে ‘বৈষম্য’র সুস্পষ্ট উদাহরণ।
ওই আইনজীবী বলেন, ‘আদানি চুক্তিতে একটি ধারা তৈরি করেছে, যেখানে বিপিডিবিকে কোনো কর ছাড় দেওয়া হবে না। এর অর্থ তারা মূলত ক্যাপাসিটির জন্য অতিরিক্ত চার্জ করতে পারে।’
বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিজিডব্লিউইডি) সদস্য সচিব মেহেদী হাসান মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।
তিনি বলেন, ‘কর ছাড়ের পর আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ ১২-১৫ শতাংশ কমানো উচিত ছিল।’
অধ্যাপক আনু মুহম্মদ এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘এখানে স্পষ্টতই কোনো আলোচনা হয়নি। আদানি এই শর্তগুলো দিয়েছে এবং বাংলাদেশ রাজনৈতিক লাভের জন্য সব শর্ত মেনে নিয়েছে।’
টিম বাকলি বলেন, ‘করপোরেট কর ছাড় আদানির জন্য উৎপাদন খরচ কমাতে এবং লাভের পরিমাণ বাড়ানোর একটি উপায় ছিল। আদানি অস্ট্রেলিয়ায় তার কয়লা খনির জন্য যে পরিমাণ কর দেয়, তা কমানোর জন্য একাধিক উপায়ও বের করেছে।’
বাংলাদেশ কেন এই চুক্তিতে সই করেছে?
মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের শেয়ার কারসাজির তথ্য প্রকাশের পর বাংলাদেশেও আদানি পাওয়ারের চুক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ে।
আগেও যারা বিভিন্ন সময় আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন, তারা জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ কেন চাহিদা না থাকার পরেও
মেহেদী হাসান ভারতের অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান গ্রোথওয়াচের সঙ্গে যৌথভাবে একটি নিবন্ধ লেখার পর বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’
হাসান বলেন, ‘তবে আমাদের কথাগুলো রয়ে গেছে এবং এখন সেগুলোই বের হয়ে আসছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এমন না যে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি। যারা এর আগেও অনেক বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, তারাই আদানির চুক্তির সময় দায়িত্বে ছিলেন। তারা জানতেন যে এই চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একটি সূত্র জানায়, ‘এই চুক্তিপত্রটি পড়ার জন্য আমরা খুব বেশি সময় পাইনি, বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেই এটি যাচাই করে আমাদের শেষ সময়ে জানিয়েছে।’
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
পিডিবি চেয়ারম্যান কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলেও তিনি এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
তার অনুরোধে ডেইলি স্টার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নগুলো লিখে পাঠালেও এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত সেগুলোর উত্তর দেননি।
পরিত্রাণের উপায় কী?
আদানির সঙ্গে হওয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ১৯.৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো বিরোধের সমাধান করা না গেলে তা শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার, ২০১৬ এর ষষ্ঠ সংস্করণের সালিশের নিয়ম অনুসারে নিষ্পত্তি করা হবে।
দ্য ডেইলি স্টারকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, পিডিবি আদর্শিকভাবে এই চুক্তি বাতিল করতে সিঙ্গাপুরে যেতে পারে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এই ব্যয়বহুল চুক্তির খরচ জনগণকেই বহন করতে হবে। বাংলাদেশের জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়েই চুক্তিটি করা হয়েছে বলেই আমরা এর বিরোধিতা করি।’