পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একটি সরল সত্য অকপটে উচ্চারণ করেছেন। তিনি (তখন মন্ত্রী ছিলেন না) পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একসময় একটি ছাড়পত্র পেতে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। এই খবর জেনে কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত বোধ করতে পারেন যে তিনি প্রভাবশালী বলেই এত কমে ছাড়পত্র লাভ করতে পেরেছেন। আবার কেউ ভাবতে পারেন, জনপ্রশাসনের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে যে তাঁর মতো একজন ব্যক্তিকেও উৎকোচ দিতে হয়।
তবে এই অপ্রিয় বাস্তবতা মন্ত্রী পদে থেকে জনসমক্ষে প্রকাশ করার একটি তাৎপর্য রয়েছে। আর সেটা হলো জনপ্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে, সে ব্যাপারে তাঁর উদ্বেগ। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এতটাই বল্গাহীন যে জনপ্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার জনপ্রিয় মেঠো বক্তৃতা বহুকাল আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ২৯ মার্চ ‘জলাশয় ভরাট, নগরায়ণ ও সুশাসন’বিষয়ক সেমিনারে মন্ত্রী, পরিবেশবিদ, স্থপতি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের প্রায় সবাই মত দেন, জলাশয় ভরাটের প্রধান কারণ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। সুতরাং, টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র দেওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
নির্বাচনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজনীতিতে ও নীতিনির্ধারণে অনেক নতুন নেতৃত্বের অভিষেক ঘটছে। কিন্তু সুশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী প্রশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক তৎপরতা বা অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না।
নব্বইয়ের দশকের গোড়াতেও প্রশাসনকে ঘুষ-দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে জাতীয় নেতারা প্রায়ই অঙ্গীকার ব্যক্ত করতেন। লোক দেখানো হলেও কিছু নির্দিষ্ট বক্তব্য দিতেন। এমনকি দুর্নীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে কতটা দণ্ডিত কিংবা তিরস্কৃত হয়েছেন, তার বিবরণ প্রকাশ করা হতো।
সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রবণতা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে কিংবা লুপ্ত হতে চলেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। সুতরাং, পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ্যে এমন একটি বাস্তবতা তুলে ধরেছেন, যা মোটেই চমকপ্রদ খবর নয়। তবে অনেকেই এটা দেখতে চাইবেন এবং আশা করবেন যে পরিবেশমন্ত্রী পরবর্তীকালে জাতির সামনে নতুন কী বক্তব্য নিয়ে আসেন। তিনি নিশ্চয়ই সব জঞ্জাল কোনো জাদুবিদ্যাবলে উধাও করে দিতে পারবেন না। তবে কখনো ব্যক্তিবিশেষের আন্তরিক চেষ্টা পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন সাধন করতে পারে।
তেমনই একটি আশাবাদ হচ্ছে পরিবেশমন্ত্রীর নতুন উদ্যোগ। তাঁর কথায়, এবারেই মন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ভাবমূর্তি ভালো করার জন্য’ বলেছেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী অবৈধ প্রকল্পগুলো যাতে ছাড়পত্র না পায়, সে জন্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
আমরা আশা করি, পরিবেশমন্ত্রী ব্যর্থ হবেন না; নিয়মবহির্ভূত ইটভাটা ১৬ জুনের মধ্যে ধ্বংস করতে সফল হবেন। তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কাও অমূলক প্রমাণিত হোক। অন্তত পরিবেশবাদীরা দেশবাসীকে একটুখানি স্বস্তি ও অনিয়ম রোধে সরকারি সাফল্যের খবর নিশ্চিত করুন।