এখন আর পাখির কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গেনা- গ্রামবাংলার ক্ষেত্রেও কথাটি শোনা যায় এখন। পাখির কলকাকলিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠার গল্প এখন অতীত।
গ্রাম বাংলায় এখন আর আগের মত পাখির ডাক শোনা যায় না। গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি।
বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে ৩০টি বর্তমানে বিলুপ্ত, অতীতে ছিল। ৩০টির ২৯টি অন্য দেশে পাওয়া গেলেও একটি (গোলাপী শির হাঁস) সম্ভবত পৃথিবী থেকেই বিলুপ্ত। অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির পাখি সাম্প্রতিককালে এদেশে দেখা গেছে এবং এরা বাংলাদেশে থাকে বা আসে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ১৪৩ টি প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে কালেভদ্রে দেখা যায়। বাকি ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়।
এই ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ পাখি যেগুলো স্থায়ীভাবে এ দেশে বাস করে। বাকি ১৭৬টি বাংলাদেশের ‘পরিযায়ী’ পাখি যেগুলো খন্ডকালের জন্য নিয়মিতভাবে এ দেশে থাকে।
এই ১৭৬ প্রজাতির মধ্যে ১৬০টি শীতে এবং ৬টি গ্রীষ্মে বাংলাদেশে থাকে, বাকি ১০টি বসন্তে এদেশে থাকে, যাদেরকে ‘পান্থ-পরিযায়ী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ধংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করা কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়।
বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, ফ্যসকে, কোকিল, ডাউক, ক্যাসকেচি, বাবুই, মাছরাঙ্গা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাঁচাসহ আরো অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক।
গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত বসন্তে যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলত সেই পাখির দেখা আর পাওয়া যায় না।
বর্তমান প্রজন্ম চেনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনি কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস।
কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীট পতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরাও দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে। এ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় পাখ-পাখালি।