‘ধর্ষণের সমস্যা’-র জন্য জার্মানির অন্যতম প্রাচীন লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্নশিপ পেলেন না এক ভারতীয় ছাত্র৷ একের পর এক ধর্ষণ, মহিলাদের প্রতি অপরাধ এবং নির্ভয়া কাণ্ডে ফাঁসির আসামিদের নিয়ে বিবিসি-র তথ্যচিত্র ভারতে সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এই এক নতুন বিতর্ক৷
ওই ভারতীয় ছাত্রের এক সহপাঠী প্রশ্নোত্তরের ওয়েবসাইট কুয়োরা-য় লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এবং বায়ো-অর্গানিক কেমিস্ট্রির প্রফেসর অ্যানেটি জি বেক-সিকিঞ্জার-এর সঙ্গে তার বন্ধুর ই-মেল চালাচালি তুলে দিয়েছেন৷ যদিও ছাত্রটি বা নিজের নাম প্রকাশ করেনি৷ ই-মেলে প্রফেসর অ্যানেটি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমি কোনো ভারতীয় ছাত্রকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছি না৷ ভারতে ধর্ষণের সমস্যা নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনি এবং তার তীব্র বিরোধিতা করি৷ আমার গ্রুপে অনেক ছাত্রী রয়েছে৷ তাই মনে করছি ব্যাপারটাকে কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না৷’
ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত মাইকেল স্টেইনার এতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ প্রফেসর অ্যানেটিকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারত ধর্ষকদের দেশ নয়৷ আপনি বিষয়টাকে হালকা, একপেশে করে দেখছেন৷ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে ভারতে যে লড়াই চলেছে এর ফলে তা ব্যাহত হবে৷’
প্রফেসর অ্যানেটি ই-মেলে এমন মন্তব্য করা অস্বীকার করেননি৷ তবে বলেছেন, পুরো ঘটনাটাই দুর্ভাগ্যজনক, ভুল বোঝাবুঝির ফসল৷ আমি ভারতীয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে নই৷ এর আগেও অনেক ভারতীয় ছাত্রকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়েছি৷ এখনও আমার ল্যাবরেটরিতে ২ ভারতীয় ছাত্র কাজ করছেন৷ তবে আমার ল্যাব এখন ভর্তি৷ আর কোনো ছাত্র নেওয়া সম্ভব নয়৷ সেটা বলতে গিয়েই এমন ভুল বোঝাবুঝি৷ আশা করি আমার এই বক্তব্যের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে৷ যদিও ছাত্রটির বন্ধু আরও বেশ কয়েকটি ই-মেল কুয়োরা-য় তুলে দিয়েছেন৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতে ধর্ষণের সমস্যা নিয়ে এই মহিলা প্রফেসরের মনোভাব বেশ কড়া৷
তিনি লিখেছেন, ‘এটা ঠিক যেকোনোপ ধারণা বা বক্তব্য সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ তবে এটাও অবিশ্বাস্য যে এতদিন পরেও ভারতীয় সমাজ ধর্ষণের মতো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি৷ জার্মানিতে বসে আমরা ভারত থেকে নিয়মিত ধর্ষণের ঘটনার খবর পাই৷ বিশেষত এই গণধর্ষণের ঘটনাগুলি তো খুব উদ্বেগজনক৷ আমার কাছে এর মাধ্যমেই মহিলাদের প্রতি ভারতীয় সমাজের মনোভাব প্রকাশ পায়৷ ভারতে তো অনেক মহিলা পর্যটককে তুলে নিয়ে গিয়ে পুরুষরা নানাভাবে হেনস্হাও করে৷’
অ্যানেটির আরও দাবি, ‘আমার মতো জার্মানির অনেক মহিলা প্রফেসরই এই কারণে ভারতীয় ছাত্রদের নিতে চাইছেন না৷ ইউরোপের অনেক মহিলা প্রফেসরও এই দলে নাম লেখাচ্ছেন৷’ – ইন্ডিয়ান একসপ্রেস ও হাফিংটন পোস্ট।