ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি, ফ্ল্যাটের তথ্য বেরিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির ১২ জন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের কেউ প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
নেতারা বলছেন, দল ও সরকারে আবদুস সোবহানের এখন ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বিদেশে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতা নির্বাচন এবং জাতীয় স্থানীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়েও তাঁর ভূমিকা দেখা যায়। দলের নেতারা মনে করেন, আবদুস সোবহানের যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা অস্বাভাবিক নয়।
আবদুস সোবহান মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তাঁর ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তি (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) রয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি। গত শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের পর তিনি এসব সম্পত্তি কিনেছেন। যার মূল্য ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)। কিন্তু ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় তিনি ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামায় এসব সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি।
এ ছাড়া আবদুস সোবহান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচিত হওয়ার সাত মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে তিনি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না।
ওসিসিআরপির প্রতিবেদনের বিষয়ে আবদুস সোবহানের বক্তব্য জানতে গত শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি এখন মাদারীপুরে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আছি। গত শনিবার বিষয়টি ভালোভাবে জেনে তারপর কথা বলব।’ এরপর শনিবার ও গতকাল তাঁর ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যে অভিযোগ এসেছে, সেটা আবদুস সোবহানেরই পরিষ্কার করা উচিত। চুপ থাকলে সবাই ধরে নেবে বিদেশে তাঁর অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য সত্য। এতে দল ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
আবদুস সোবহান ২০১৮ সালে মাদারীপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন। সেই আসনে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তারও আগে সেখানে সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।