সাধারণ মানুষের ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগে আড়িপাতার কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতে ব্যালটে সীল দিয়ে গঠিত সংসদে তিনি একথা অকপটে স্বীকার করেন।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে দেওয়া বক্তব্যে আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাষায় ’আইনসম্মভাবে’ এই আড়িপাতার কাজটি করা হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিগত কথোপকথনে আড়িপেতে শোনার বৈধতা দিয়ে কোন আইন আছে কি না সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি। তার ভাষায়, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গঠিত সরকারের দুর্নীতি, দু:শাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা কি সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে? অথচ, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, দু:শাসন এবং গুম-খুনের বিরুদ্ধে কথা বললেও রাষ্ট্র এবং সরকার বিরোধী কথিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এখন মামলা দায়ের করেন আওয়ামী লীগের সদস্যরা। এমন কি সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীও এমন মামলার বাদী হতে দেখা যায়। ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি এবং সরকার ও রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে একাকার করে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ই জানুয়ারি) সংসদে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিংয়ের (নজরদারি) মাধ্যমে দেশ ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির (ওএসআইএনটি) মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। একই সঙ্গে একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইনসম্মতভাবে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে আড়ি পাতার ব্যবস্থা) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
একদিন আগেই অর্থাৎ মঙ্গলবারে খবর বের হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ইসরাইল থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনছে। এর একদিন পরই সংসদে এমন তথ্য জানালেন কামাল।
আওয়ামী লীগের ভাষায় দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের চর্বিত চর্বণে বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে দেশের অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে দৃঢ় অবস্থান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
স্পিয়ারহেড নামের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে থাকা এনক্রিপ্টেড হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা, ফেসবুক চ্যাট, যোগাযোগের তালিকা, কল ও টেক্সট মেসেজ সংগ্রহ করা যায়
amardesh