বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য জনগণ প্রস্তুত। যেকোনো স্বৈরাচার সহজে ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। তাদের বিদায় করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস আছে পাকিস্তানের আইয়ুব স্বৈরাচারকে হটিয়েছে ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান। ’৯০-এ স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়েছে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতিকে হটিয়েছে জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। তাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিজয়ের মাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনে ১২ দলীয় জোটকে স্বাগত জানান তিনি।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, আসুন আমরা দেশের মানুষের মাঝে গণজাগরণ সৃষ্টি করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আজকে এই দেশকে মুক্ত করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। এ সরকার রাষ্ট্রের যে কাঠামো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, আসুন সেই কাঠামোকে মেরামত করি। তাহলে এ দেশে মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে।
এ বিএনপি নেতা অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ অভিযানের নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করতে ৩৭ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বানও জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন-গয়েশ্বর : গুম-খুন বন্ধ করে পদত্যাগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির মানববন্ধনে তিনি এ আহ্বান জানান। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলব, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ঘোষণা দেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকারের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করলাম, রাষ্ট্রপতিকে বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করতে। এরপর ওবায়দুল কাদেরকে খেলতে বলুন। দেখবেন রাস্তায় হাঁটতে পারবেন না। পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষ পাথরের মতো শক্ত আবার কাদার মতো নরম। তারা আপনাকে ক্ষমা করলেও করতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামসহ কারাবন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। এতে আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্যাহ ইকবালের সভাপতিত্বে ও সদস্য আবু তালেবের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ।
সম্প্রতি গাজীপুরে বিএনপির এক নেতাকে ডাণ্ডাবেড়ি অবস্থায় জানাজায় অংশ নিতে বাধ্য করা প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, এটা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? দেশি-বিদেশি সবাই দেখেছেন। মরার পরও ডাণ্ডাবেড়ি পরান। আপনাদের তো মরা মানুষের ওপর নৃত্য করার অভ্যাস আছে। পৈশাচিক মনোবৃত্তির পরিণতি ভয়াবহ।
আন্দোলন করি বা না করি এই সরকারকে যেতে হবে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, এখন আপনারা আমাদের প্রতিদিন কোর্টে নেন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে গেলে আপনাদের ২৪ ঘণ্টা কোর্টে থাকতে হবে। আমরা মামলা না করলেও দেশের ১৮ কোটি মানুষ মামলার প্রস্তুতি নেবে।
jugantor