চীন কি করোনার ঢেউ নিজের ওপর ডেকে আনছে?

0

চীনে আবারো হু হু করে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

করোনা রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোর ওপর যেমন চাপ পড়েছে তেমনিই মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে শ্মশানগুলোতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

বেইজিং, চংকিং ও গুয়াংঝৌ শহরের শ্মশানগুলোয় মঙ্গলবার সারি সারি মৃতদেহ দেখা গেছে। শ্মশানগুলোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাধারণ সময়ের চেয়ে তারা এখন অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন। চীনে এখন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ হয়ে পড়েছে।

কিন্তু এত কিছুর পরও সারাবিশ্ব যেখানে করোনা রোধে বিভিন্নমাত্রায় শক্তিশালী এমআরএনএ শট দিচ্ছে এবং করোনাকে মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেখানে চীন মূলত উভয়কেই পাশ কাটিয়ে চলছে বলে খবর এনডিটিভির।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, চীনে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রত্যাশিত ঢেউ একটি ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে রেখে দেওয়া হচ্ছে। কারণ সরকার করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করছে না। এ কারণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় করোনা অধিক হারে ছড়িয়ে পড়ছে।

আমেরিকার সংক্রামক রোগ সোসাইটির সহকর্মী এবং ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গিজেল স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ড্যানিয়েল লুসি বলেন, আগামী দিন, সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে চীনে অবশ্যই ওমিক্রনের আরও সাব-ভেরিয়েন্টগুলো বিকাশ করবে। তবে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে এসব নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো দ্রুত চিনতে এবং পদক্ষেপ নিতে যে সময়ক্ষেপণ হবে তা বিশ্বকে আরও বিপদে ফেলতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ লুসি বলেন, ২০২০ সালের শেষের দিকে ভারতে ডেল্টায় অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ সংক্রামিত হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও এটি অনিবার্য নয়, তবে বিশ্বকে অবশ্যই এ ধরণের ঘটনার জন্য সুরক্ষামূলকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে ভ্যাকসিন, চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত থাকে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীন থেকেই করোনাভাইরাস মহামারি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৬৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। সে সময় চীনে মৃত্যু বা সংক্রমণের সংখ্যা একেবারেই কম ছিল।

মহামারি করোনা ঠেকাতে ৩ বছর ধরে চীন নজিরবিহীনভাবে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ও গণপরীক্ষা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে চীনের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হলে কর্তৃপক্ষ এসব বিধিনিষেধের অনেকটাই তুলে নেয়।

সিদ্ধান্তটি যে যথাযথ ছিল না তা কয়েক দিনের মধ্যেই টের পাওয়া গেছে। সেখানে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কয়েক দিনে চীনের বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে গেছে। পাশাপাশি সৎকার কেন্দ্রে লাশের স্তূপ জমেছে।

চীনের মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ এরিক ফেইগল-ডিং জানান, চীনের হাসপাতালগুলো এখন কোভিড রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে চীনের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের কোভিড সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। স্পষ্ট কোনো সংখ্যা জানা না গেলেও বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হচ্ছে, চীন কোভিডে মৃতদের জায়গা সংকুলান করতে পারছে না। হঠাৎ করেই এত মৃত্যুর স্রোত মোকাবিলা করতে খেই হারিয়ে ফেলছে বিভিন্ন প্রদেশের কর্তৃপক্ষ। তিন কোটি মানুষের শহর চংকিং কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে- এত মৃতদেহ রাখার জায়গা তাদের নেই। এছাড়া তারা ওষুধ সংকটেও পড়েছে।

মঙ্গলবার চীন জানিয়েছে, তারা কোভিড-১৯ মৃত্যুর ক্ষেত্রে সংজ্ঞা নতুন করে সাজিয়েছে। এর ফলে কোভিডে মৃত্যুর হিসাবে শুধু তাদেরই ধরা হবে, যারা কোভিড পজিটিভ ছিলেন এবং শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।

কোভিডে অসুস্থ হয়ে হার্টঅ্যাটাক বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেলে সেটিকে কোভিডে মৃত্যু বলে গণ্য করা হবে না।

চীনে কোভিড সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মৃত্যুর হারও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তবে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞা পরিবর্তন করেছে চীন। কারণ চীনের বিভিন্ন অংশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন; কিন্তু ক্যাটাগরির ভিন্নতায় ফেলে চীন এ সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে।

উৎসঃ   jugantor
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More