দেশে ‘গুম, খুন, সন্ত্রাস ও বিরোধী শক্তির ওপর’ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের’ প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েক দফায় বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি মিছিলে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থীর ফোন তল্লাশির অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। কয়েকটি সড়ক ঘুরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। মশাল মিছিলে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুরো কর্মসূচিতে তিন দফায় বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। মিছিলের শুরুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক এস.এম দিদারুল আলম দীপ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন শহীদ মিনারে জড়ো হন। মিছিলে যাতে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মী না থাকে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান না দেওয়া হয়-সে বিষয়ে সতর্ক করেন তারা। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য সীমান্ত বর্ধনের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে তারা।
তাদের অভিযোগ, মিছিল শেষে সমাবেশ করতে গেলে ফের বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া সেখানে স্লোগান দিতে গেলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। সে সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে টানা-হিঁচড়া করা হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে যে এখন গঠনমূলক সমালোচনা করা কিংবা ব্যক্তি স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই তার প্রমাণ ছাত্রলীগের আজকের কর্মকাণ্ড। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ কোন আইনে বাধা প্রদান করে?’
মশাল মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। দেশে পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করে সাধারণ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘দেশের কোনো দুর্নীতি বা অপশাসনের ব্যাপারে জনগণ কথা বলতে চাইলে, তার মুখ চেপে ধরা হচ্ছে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ মিছিলে বাধা প্রদান করেছে।’
মশাল মিছিলে বাধা প্রদানের অভিযোগ ওঠা নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে পরিচিত।
জানতে চাইলে লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যে কেউ মিছিল-মিটিং করতে পারে, সেটাতে কেউ বাধা দেবে না-এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যখন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়া হয়, তখন ছাত্রলীগ সেটা প্রতিহত করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রনি হোসাইন বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। হট্টগোল সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।’