মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মঙ্গলবার বিকেলের ওই অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’। সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীদের অভিযোগ, ব্যানারের এই লেখা দেখে সেটি খুলে ফেলতে চাপ দেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান। এরপর লেখাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করেন তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যানারে দুঃশাসন শব্দটি লেখা থাকায় সেটি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে হামলা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে তাঁদের ব্যানারের সেই লেখা বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছিল। তবে চাপ দিয়ে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠান শুরুর আগে সদর থানার ওসি এসে ব্যানার সরিয়ে ফেলতে চাপ দেন। অনুষ্ঠানে আসা শিশুশিল্পীদের কথা চিন্তা করে ব্যানার না সরিয়ে লেখাটি কালো কাপড়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করেছি।’
এটি স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতি আক্রমণ বলে মনে করেন শংকর রায়। তিনি বলেন, ‘দুঃশাসন অপছন্দ হয় কার? যিনি দুঃশাসন করেন তাঁর। এটি তো আমাদের বিভিন্ন সংগ্রামের স্লোগান। বিষয়টি এত বড় করে দেখার কারণ আমাদের জানা নেই।’
পুলিশ এসে ব্যানার খুলে ফেলার জন্য চাপ দিলে লেখাটা কালো কাপড়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করে সাংস্কৃতিক জোটছবি: প্রথম আলো
পুলিশের এমন আচরণে অবাক হয়েছেন উল্লেখ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ একটি গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন কাজ করেছেন। ওই গোষ্ঠী ত্বকী হত্যাসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায় প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায়। তাই আমরা প্রতিবাদে কালো কাপড় দিয়ে ব্যানার ঢেকে অনুষ্ঠান করেছি। আমরা ব্যানারে দুঃশাসন লিখে ভুল করিনি। কারণ, আমার এখনো ত্বকী হত্যার বিচার পাইনি।’
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে এখন দুঃশাসন যে চলছে। এতে আর রাখঢাক নেই। আমরা এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাই। একুশের চেতনা হচ্ছে, শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানো। কিন্তু বারবার তারা জনগণের অধিকারকে পদদলিত করতে চেয়েছে। পারেনি। এ শিক্ষাটা কোনো শাসকগোষ্ঠী নেয় না।’