নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলাপাড় শুরু হয় নারায়ণগঞ্জে। শিরিন বেগমের স্বামী সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি। শিরিন বেগম নিজের প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।জানা গেছে, ‘প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ার’ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে তার সনদ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
উপ-সচিব মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) ৭৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২–এর ৬(গ) ধারা অনুযায়ী প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে শিরিনের নাম বাতিল করা হয়। তার মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ছিল ১৯৩১।বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৪তম সভার আলোচনাসূচি ১.০ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পরমেশ্বরদী গ্রামের সামসুল ইসলাম ভুইয়ার স্ত্রী শিরীন বেগম যার গেজেট নং ১৯৩১, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাতিল করা হলো।নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রফেসর শিরিন বেগমের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার একটি আলাপ ওঠে।
ওই সময় সোনারগাঁ উপেজলারই মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে শিরিন বেগমর সক্রিয় ভূমিকা থাকার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। পরবর্তীতে বিতর্কিত পরিস্থিতিতেই তিনি কীভাবে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সনদটি বাতিল করা হয়েছে বলে শুনেছি তবে আমরা এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাইনি।সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ান উল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘(শিরিন বেগমের) মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে অফিসিয়ালি গেজেট থেকে বিষয়টি এখনো অবহিত করা হয়নি।’শিরিন বেগমের স্বামী সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভুইয়া দাবি করেন, তিন বছর আগে তার স্ত্রী শিরিন বেগম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদন যাচাই–বাছাই শেষে শিরিন বেগমের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।স্ত্রীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে সামসুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন শিরিন বেগম। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন আদালত। শিরিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে কোনো ভাতাও নেননি বলে দাবি করেন তার স্বামী।নারায়ণগঞ্জে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছেন দাবি করে সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া আরো বলেন, সেগুলো বাতিল না করে তার স্ত্রীরটি কেন বাতিল করা হলো তা বোধগম্য নয়।
Nayadiganta