বাস্তিল দূর্গ পতনের মতো স্বৈরাচারে “আয়না ঘরের” পতন

এম এ হাসান, জার্মানি 

0

এম এ হাসান, জার্মানি

বাংলাদেশের কোটা সংষ্কার আন্দোলনটি বাস্তিল দূর্গ পতনের পথ অনুসরণের বাংলাদেশের স্বৈরাচার সরকারের আয়না ঘরের পতন ঘটিয়েছে । ১৭৮৯ সালে ১৪ জুলাই ফরাসি বিপ্লবের গতিপথে চরম স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতন একটি যুগের পতন ঘটায়। এখন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৬ বছরে চরম দূর্নীতি, দুঃশাসনের ও মানুষ হত্যার এক যন্ত্রণাদ্বায়ক শাসনে পতন ঘটিয়েছে গত ৫ ই আগষ্ট গণভবন দখলের মধ্য দিয়ে । বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচারের অন্যতম কেন্দ্র যেমনটা হলো বাংলাদেশের স্বৈরাচারের “আয়না ঘর।”

১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফরাসি রাজতন্ত্রের দমননীতির মূল প্রতীক কুখ্যাত বাস্তিলে বিক্ষোভ হয়। এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত “থার্ড স্টেট” বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেটি এখন বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র-জনতা ঘটিয়েছে । এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ ঠিক একই ভাবে গত ১৬ বছরে সরকার দলীয় লোকেরা দূর্নীতি,জুলুম ও চাঁদাবাজি মাধ্যমে টাকা বানিয়েছেন যার একটি মাত্র উদাহরণ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন ৪ শত কোটি টাকার মালিক ( প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া তথ্য মতে)। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই ফ্রান্সে কোন আয়কর দিত না যে ভাবে তারা দেয় না, দলীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে পার পেয়ে যায়। যারা আয়কর দিত তারা তেমন কোন সুবিধা ভোগ করতে পারত না। এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদেরকে এই বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হত যেভাবে প্রতিবাদ করলে বাংলাদেশেও রাজাকার বানিয়ে দিতেন এবং জেল জুলুম চালিয়েছে স্বৈরাচারী সরকার, বছরের পর বছর ভিন্ন মতাবলম্বীদের আয়না ঘরে আটকে রেখেছে বিনা বিচারে।

বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। একবার কোন বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে জীবন নিয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকত না যেমনটা বাংলাদেশ সরকার গুম করতেন । কারাগারের ভিতরেই মেরে ফেলা হত অসংখ্য বন্দীদের যে ভাবে বাংলাদেশ সরকার গত ১৬ বছরে

১০ হাজারেও অধিক আন্দোলনকারীদের নানান ভাবে হত্যা করেছে।

১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই নির্বাচিত প্রতিনিধি, রক্ষী বাহিনির সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের বিক্ষুব্ধ মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়। রক্তক্ষয় এড়াতে প্রতিনিধিরা দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব ছিল বাস্তিলে ৭ জন রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া। দ্য লোন সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে বিক্ষুব্ধ জনতার ঢেউ বাস্তিল দুর্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুর্গের সৈন্যরাও ভিতর থেকে কামান দাগতে থাকে। প্রায় দুইশো বিপ্লবী মানুষ হতাহত হয় । এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে এখন যে ভাবে বাংলার সাধারণ জনতা এগিয়ে আসেন গণভবনে দখলের জন্য, স্বৈরাচার বাধ্য হয়ে পালিয়ে যায়।

তখন জয় হয়েছিল সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার। বাংলাদেশেও জয় হয়েছে সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার।বাংলাদেশর সকল মুক্তিকামী তরুণ ছাত্র-জনতাকে বিপ্লবী লাল সালাম। আমার বিশ্বাস এখন বৈষম্যহীন ও শোষণ মুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়বেন ছাত্র-জনতা। মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ।

 

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

 

এম এ হাসান, জার্মানি।

ছবি: বাস্তিল, ফ্রান্স।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More