বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক দেলোয়ার হোসেন (২৮) নিহতের ঘটনার আটদিন পার হলেও পরিবারে শোকের মাতম থামছে না। মা,বাবা আর স্ত্রীর আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি আইনি পদক্ষেপ। প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা বা সান্ত্বনাও পায়নি পরিবারটি।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল বড় সন্তানকে হারিয়ে বৃদ্ধ মা হেলেনা বেগম,বাবা আব্দুর রশীদ ছেলের শোকে নির্বাক। তারা ছেলে হত্যার বিচার চান তারা।
নিহত দেলোয়ারের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমার বুকের মানিককে যারা নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে তার কি বিচার হবে না। আমি কি বিচার পাব না। আমাদের কথা কেউ শুনে না। কেউ খোঁজ নেয়নি। ঘটনার ৮দিন পার হলেও ছেলে হত্যার কোনো আশ্বাস পাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐ দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে বিজিবি আর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। সবার মতো আমি ও আমার সন্তানকে নিয়ে দেখতে যাই। স্থানীয় বাসিন্দারা বিজিবিকে বিষয়টি জানিয়েছিল। কিন্তু বিজিবি সময় মত ঘটনা স্থলে না যাওয়ায় গুলির ঘটনাটি ঘটেছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে গেলে এমনটা হতো না। আমার চোখের সামনেই আমার ছেলে গুলি করা হয়।’
এ দিকে, অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে দুটি সন্তানকে নিয়ে হাহাকার করছেন নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী কবিতা খাতুন (২২)। তিনি বলেন, ‘আমি আবার সন্তানের মা হব। কিন্তু আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমি আমার সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও নিজের আগামী দিন নিয়ে দিশেহারা। আমার স্বামীকে আর ফিরে পাব না। তবে এমনভাবে কারও স্বামীর যেন মৃত্যু না হয় তার জন্য আমার স্বামীর হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি জানাই।’
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানিয়েছেন, বিএসএফের গুলিতে নিহতের ঘটনায় পরিবারের থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।
তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, ঘটনাটি খুবেই দুঃখজনক। বিএসএফের গুলিতে নিহত দেলোয়ারের শোকাহত পরিবারের প্রতি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি কোনো দিনই পূরণ হবার নয়। উপজেলা পরিষদ দেলোয়ারের পরিবারের আপনজন হিসেবে সুখে দুঃখে পাশে থাকবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলা উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন বুরুঙ্গা ছড়া এলাকার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলারের সামনে বিএসএফের গুলিতে দেলোয়ার গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। পরে ময়নাতদন্তের পর গত রোববার রাত ১০টায় নিজ গ্রামে জানাজা নামাজ শেষে এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়।