যুবলীগ নেতার গুলিতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মামুন হোসেন (২৬) নামের এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো দু’জন।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরদী পৌর সদরের পশ্চিম টেংরি কড়ইতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও গুণ্ডামি থেকে রেহাই মিলে না খেটে খাওয়া দিন মজুর রিকশাওয়ালার। খেটে খাওয়া দিনমজুর রিকশাওয়ালাকেও গুলি করে হত্যা করেন যুবলীগের গুণ্ডারা। আইন ও বিচার যখন এক ব্যক্তির হাতে চলে যায়, তখন এমন ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। কারণ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের জন্য দেশে কোন আইন নেই। তাই সাধারণ মানুষকে মারতে তাদের কোন দ্বিধা হয় না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের গুলিতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত রিকশাচালক মামুন হোসেন ঈশ্বরদী পৌরসভার পিয়ারাখালী মহল্লার মানিক হোসেনের ছেলে। আর গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন রকি হোসেন (২৬) ও সুমন হোসেন (২৮)। ঘটনায় অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনের ভাই। অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় হোসেন ও ছাত্রলীগ কর্মী ইব্রাহিম হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক জন তরুণ বুধবার রাত ৯টার দিকে কড়ইতলা এলাকায় একটি নসিমন থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পেছনে থাকা একটি লেগুনা নসিমনটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে লেগুনার সামনের কাচ ভেঙে যায়। নসিমনচালকের চাবি কেড়ে নিয়ে তাঁর কাছ থেকে জরিমানা দাবি করেন লেগুনাচালক। এতে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে নসিমনচালক ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন তরুণ এসে নসিমনচালককে কেন তাড়ানো হয়েছে,এ বিষয়ে লেগুনাচালকের পক্ষের লোকজনের কাছে জানতে চান। এতে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। বিষয়টি দেখে আশপাশের লোকজন এসে তাঁদের থামানোর চেষ্টা করলে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন তাঁর কোমরে থাকা পিস্তল বের করে গুলি করেন।
এতে স্থানীয় রিকশাচালক মামুন হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা রকি হোসেন ও সুমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন আহত তিনজনকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানে গুলিবিদ্ধ রকি হোসেন ও সুমনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পর তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের ভাই পৌর কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) এ ঘটনায় এ অভিযোগ দায়ের করেন কামালের ভাই জামাল উদ্দিন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই পলাতক আছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।