শফিউল্লাহ ইসলাম শফিকুলের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার মৌখালি গ্রামে।
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য তিনি তার ভাষায় এক দালালের শরণাপন্ন হন।
অক্টোবরের তিন তারিখে তিনি বাংলাদেশ থেকে দুবাই রওনা দেন।
শফিকুল জানতেন তিনি ইতালি যাচ্ছেন, কিন্তু যে ভয়ানক পরিণতির শিকার হতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।
বিবিসি বাংলার কাছে মি. শফিকুল বলেন ,তাকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন “তিন তারিখে ফ্লাইটে করে দুবাই যাই, সেখানে আমাকে এক রুমে ২০ জনের সঙ্গে থাকতে দেয়। দুবাইতে ১২ দিন অবস্থান করি। আমার কাছ থেকে ছয়শ ডলার নেয়। সেখান থেকে আবার আমাকে সিরিয়াতে পাঠায়। সিরিয়াতে আমাকে তিন দিন রাখা হয়। সেখানে আমাকে কোন কিছু খেতে দেয়া হয়নি। সিরিয়া থেকে আমাকে নেয়া হয় লিবিয়াতে।”
মি. শফিকুল বলছেন বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এই সব কয়টা দেশেই দালালাচক্রের লোক ছিল। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতো।
ইতালির ল্যাম্পডুসা দ্বীপের নিকট মাছ ধরার নৌকায় পাঁচশোরও বেশি অভিবাসী (ফাইল ফটো)
তিনি বলছিলেন তখন পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেনি তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, লিবিয়ার বেনগাজিতে এক কক্ষে ৪২জনকে রাখা হয়। এরপর ২/৩ জন করে লিবিয়ার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় তারা।
“আমাকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা জার্নি করে লিবিয়ার মিসরাত এলাকায় নেয়া হয়। এরপরেই আমার উপর চলে চরম নির্যাতন” বলছিলেন তিনি।
নির্যাতনের বর্ণনা দিতে যেয়ে মি. শফিকুল বলেন “গলায় পা দিয়ে মারে, মারধর করে, লাথি মারতো, মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে মারতো, ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। খেতে চাইলে বাথরুম থেকে বদনায় করে পানি এনে দিত।”
তিনি বলেন “আমি এখন চিকিৎসা নিচ্ছি, কারণ আমার মাথা দেয়ালে ঠুকে দেয়ার কারণে মাথা ঠিক মত কাজ করে না। আমি কথা গুছিয়ে বলতে পারছি না।”
মি. শফিকুল ইতালি যাওয়ার জন্য প্রথমে দিয়েছিলেন সাত লক্ষ টাকা।
চুক্তি ছিল ইতালি যেয়ে বাকি ছয় লক্ষ টাকা দেবেন।
কিন্তু লিবিয়াতে যেয়ে তাকে আটকে রেখে টাকা চেয়ে তার উপর নির্যাতন শুরু করা হয়।
এক সময় তিনি বলেন তিনি ইতালি যেতে চান না, তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসতে চান।
এতে করে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
এক সময় শফিকুলের বাড়িতে ফোন করে ঐ দালাল চক্র বলে যদি টাকা দেয়া না হয় তাহলে আরো নির্যাতন করা হবে।
শফিকুলের পরিবার তখন পুলিশকে সব তথ্য দেন লিবিয়াতে তার উপর নির্যাতন এবং সেখানে আটকে পরার বিষয়ে।
তিনি লিবিয়া থেকে ফিরে আসেন অক্টোবরের ২৯ তারিখে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, ভুক্তভোগী পরিবার নিরুপায় হয়ে গোয়েন্দা বিভাগে সহযোগিতা চায়।
এরপর যাত্রাবাড়ী থানায় মানবপাচার আইনে গত ২৭ অক্টোবর একটি মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
পরে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশি দুই জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন,গ্রেফতারকৃতদের মাধ্যমে লিবিয়ায় অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে মি. শফিকুলকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।