শিবির সন্দেহে বুয়েটের আবরারের মতোই চমেকের ৪ ছাত্রকে রাতভর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতন

0

বুয়েটের আবরার ফাহাদকে যেভাবে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, ঠিক একই কায়দায় এবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৪ শিক্ষার্থীকে ইসলামী ছাত্র শিবির করার কারণে হোস্টেলের রুম থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশের বিজেপির শাখা ইস্কনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে পরিচিত।

ভয়াবহ এই নির্যাতনে নেতৃত্ব দিয়েছে নওফেলের অন্যতম প্রধান সহযোগী অভিজিৎ।

নির্যাতনের শিকার জাহিদ হোসেন ওরফে ওয়াকিল (২২) ও সাকিব হোসেন (২২) নামের দুই ছাত্রকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।

সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন, এস এ রায়হান (২১) ও মোবাশ্বির হোসেন (২২)। নির্যাতনের শিকার ৪ ছাত্রই চমেকের ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগীরা জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসের রুম থেকে এই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়।

জানা যায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা বলে পরিচিত অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ ও ইব্রাহিম সাকিবের নেতৃত্বেই এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে অভিজিৎ ও জয় দুজনই ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনায় আড়াই বছরের জন্য বহিষ্কৃত। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।

বুধবার রাত প্রায় একটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান হোস্টেলের বি ব্লকের ৮বি নাম্বার রুম থেকে এম এ রাইয়ান ও মোবাশ্বির আহমেদ শুভ্রকে এবং সি ব্লকের ৩ সি নাম্বার রুম থেকে জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন সায়াল, ইব্রাহীম সাকিব, মাহিন আহমেদ, জুলফিকার মোহাম্মদ শোয়েব। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়াজুল ইসলাম জয় ও অভিজিৎ দাশ (যাদের বহিষ্কারাদেশ এখনো বহাল আছে) এর টর্চার সেলে। রাতভর সেখানে তাদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর সকালবেলা হাসপাতালে না নিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে রুমে আটকে রাখা হয়।

কোন সাধারণ শিক্ষার্থী যেন তাদেরকে হাসপাতালে নিতে না পারে সেজন্য তারা রুমের সামনে শিফট করে সারাক্ষণ পাহারাও দেয়। পরবর্তীতে নির্যাতিত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কলেজের অধ্যক্ষকে ফোনে বিষয়টি জানান। পরে অধ্যক্ষ পুলিশকে অবহিত করলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকবাজার থানার পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। এদের মধ্যে জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে সেখানেও হামলার আশংকায় তাদেরকে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তারা এই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। আর ভুক্তভোগী বাকি দুই শিক্ষার্থীকে প্রাইমারি চিকিৎসাও না দিয়ে জোর করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারীরা।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বুধবার রাত ১টার দিকে প্রধান হোস্টেলের রুম থেকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহারকারী কয়েকজন ছেলে আমাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। তখনই আমার পরিবার থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে তারা প্রথমে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ আর অধ্যক্ষ ম্যাডাম এসে আমাদের দুইজনকে উদ্ধার করে। বাকি দুইজনকে এই নির্যাতনকারীরা জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তাদেরকে কোন চিকিৎসাও দেয়া হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করে। পরে আমাদের ফোর্স গিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এই বিষয়ে শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। কাউকে আটকও করা হয়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পুলিশ নিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করেছি। বাকি দুইজন আগেভাগে বাড়ি চলে গেছে। এই দুই শিক্ষার্থী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More