সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনে ফ্যাসিস্ট স্টাইলে নির্বাচন সম্পন্ন: সিনিয়ররা বললেন নজিরবিহীন

0

সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের ফ্যাসিস্ট স্টাইলের নির্বাচন শেষ হয়েছে-হট্টগোল, হাতাহাতি, শ্লোগান, পাল্টা শ্লোগান ও বিরোধী দলের আইনজীবীদের ভোট দানে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে। ঢাকায় হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শত বছরের বেশি সময়েও আইনজীবী সমিতির এরকম ফ্যাসিস্ট স্টাইলের নির্বাচন হয়নি কখনো। সিনিয়র আইনজীবীরা এবারের নির্বাচনকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ভোটদানে বিরত থাকলেও বর্জনের ঘোষণা দেয়নি। তারা দাবি করেছেন, নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

ভোটের একদিন আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পদত্যাগ করে দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ান। পরিচালনা কমিটিকে অবহিত না করেই সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান দখলদার সেক্রেটারি আবদুন নূর দুলাল নির্বাচনের ব্যালট ছাপিয়েছেন। তিনি এবারো আওয়ামী প্যানেলের সেক্রেটারি প্রার্থী। গত বছরের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর জোর করে ভোট পুনর্গণনার নামে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে বিরোধের জের ধরে এবারো নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পদত্যাগ করেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট গ্রহনের জন্য নির্ধারিত তারিখ ছিল ১৫ ও ১৬ মার্চ। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পদত্যাগ করায় বিরোধী দলের সমর্থক আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ভোটের আগে নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি জানান। এই দাবিতে তারা অনড় থাকলে প্রথম ভোটের দিন ১৫ মার্চ সকালে পুলিশ ডেকে তাদেরকে লাঠিপেটা করাসহ জোর করে ভোট গ্রহন শুরু করেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পন্থিরা। তবে বিএনপি সমর্থক ও সমমনা সাধারণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দানে বিরত থাকেন।

আওয়ামীপন্থীরা দাবি করছেন, ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ১৩৪জন ভোট দিয়েছেন। কিন্তু মূলত কতজন আইনজীবী ভোট দিতে গেছেন এটা কেউ হিসাব রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। কারণ, ভোটর জন্য তৈরি করা জায়গা আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডার ও পুলিশের দখলে ছিল। অতীতে কখনো সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পুলিশের প্রয়োজন পড়েনি। এবার ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন ছিল সুপ্রিমকোর্টে ভোটকে কেন্দ্র করে। মূলত সবই ছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অনুসারীদের দখলে।

এদিকে ভোট গ্রহনের দ্বিতীয় দিন বিরোধী দল সমর্থক আইনজীবীরা ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ স্লোগানে উত্তাল করে রাখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে বিক্ষোভের সময় এমন শ্লোগান দেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৬ই মার্চ) দুপুরে নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। বিক্ষোভে তারা ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ভোটকেন্দ্রের সামনে এলে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা পাল্টা স্লোগান দিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। এতে দুপুর ১২টা থেকে উভয় দলের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নির্বাচনে প্রথম দিনের হট্টগোল, হামলা, ভাংচুরের পর শেষদিনেও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আইনজীবীরা। তারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ধাক্কা দিলে দুই পক্ষে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে দুপক্ষে তুমুল উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।

ভোট গ্রহনের প্রথম দিন বুধবার (১৫ই মার্চ) ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। ভোট চুরির প্রতিবাদ করায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গুণ্ডা পুলিশ ও আইনজীবীরা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলায় আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ভোট হবে দুদিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার)। দুদিনই সকাল ১০টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের কথা। নির্বাচনের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

বুধবার সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবীতে ভোটকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পদত্যাগ করায়, ভোটের আগে নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি করেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে সামনে আসলে শুরু হয় হট্টগোল। এ সময় শতাধিক পুলিশ ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

ঘটনার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। তাদের এলোপাথাড়ি লাঠিপেটা করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোট গ্রহণের মধ্যে গতকাল বিকেল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকেল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ।

হাতাহাতি-মারামারি ও ভোট বন্ধের ঘটনায় বিএনপিপন্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। বিষয়টিতে পাত্তা না দিয়ে বিএনপিপন্থীরা দাবি করেছেন, সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোট গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন চলবে।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More