হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-এর শ্লোগান জয় শ্রীরাম শীরে ধারণ করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা

0

ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় হিন্দু সম্মেলনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু

ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় হিন্দু সম্মেলনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু

হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন আর এস এস-এর শ্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘হিন্দু স্বার্থে এক মত’ এই শ্লোগানে আয়োজিত হিন্দু জাতীয় সম্মেলনে তাদের ভাষায়, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন বক্তারা।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় হিন্দু সম্মেলনে এই প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়েছে।

এর আগে এ সম্মেলন উপলক্ষে তাদের প্রচারপত্রে হিন্দু সংস্কৃতি অনুযায়ী তাদের দেবীর মূর্তির ছবি দিয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করা হয়। এতে প্রশ্ন উঠেছে একটি চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন আরএসএস। যাদের মূল শ্লোগান হচ্ছে জয় শ্রীরাম, এই শ্লোগানকে শীরে ধারণ করেই সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের আহ্বান! তারা কাদেরকে সাম্প্রদায়িক মনে করেন এই দেশে।

দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। তাদের ধর্ম ইসলাম। যারা ইসলামের কথা বলেন, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠন সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের কথা বলছেন। তারা যে হিন্দু ধর্মের স্বার্থে একমত, জয় শ্রীরাম শ্লোগান শিরে ধারণ করেছে সেটা কিন্ত তাদের মতে সাম্প্রদায়িকতা নয়! জাতির সাথে এর চেয়ে বড় উপহাস আর কি হতে পারে? অথচ, তারা মূলত এদেশের মুসলমানদেরই সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করে থাকে।

এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন।

তাদের ভাষায় সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠিত হিন্দু জাতীয় সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভারতের কট্টরপন্থী সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যের জন্য কুখ্যাতি পাওয়া দিলীপ ঘোষের মতো কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী নেতার উপস্থিতিতে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবও প্রকাশ করেন বক্তারা।

হাসানুল হক বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের আস্ফালন বন্ধ করতে হবে। জনগণের সুবিধার্থে জিনিসপত্রের দামও কমাতে হবে।

হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি হয়ে যুদ্ধ করেছেন মন্তব্য করে জাসদ সভাপতি বলেন, জয় বাংলা বলে আত্মাহুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ব্যর্থতা যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে, সাম্প্রদায়িকতার আলখাল্লা পড়ে মানুষকে বিভক্ত করা হচ্ছে।

শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর উল্লাস করা ইনু বলেন, ও পাড়ায় হিন্দু, ও পাড়ায় মুসলিম, মানুষ কোন পাড়ায়?

চরম সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠীর জাতীয় সম্মেলনে শরীক হয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা করবে না, ভাগ করবে না, বৈষম্য করবে না। সব পাড়ায় বাঙালি দেখতে চাই, সব পাড়ায় মানুষ দেখতে চাই।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পরোক্ষ সমালোচনা করে বিজেপির ঘনিষ্ঠ এই কমিউনিস্ট নেতা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরে সংবিধানে এখনও সাম্প্রদায়িকতার ছাপ আছে, সামরিক শাসনের ছাপ আছে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপির বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও পৃষ্ঠপোষক এবং জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, পাকিস্তান যখন গঠন করা হয় তখনও বাংলাদেশে হিন্দু ছিল ৩৩ শতাংশ। সেটা বর্তমানে কমতে কমতে এখন ৭.৯ শতাংশে নেমেছে। সেসময় পাকিস্তানের সংসদে এমপি ছিল ৭২ জন, বর্তমানে সেটা কমতে কমতে ১৬ জনে নেমেছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলেও কোনো হিন্দু এমপি এর প্রতিবাদ করেননি।

ধর্মীয় সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে আসন নির্ধারণের দাবিও জানান বিজেপির বাংলাদেশের এই পৃষ্ঠপোষক।

সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত হিন্দু মহাজোটের চার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে বসুন্ধরা গ্রুপ।

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বিধান বিহারী গোস্বামীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় লোকসভার সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More