জাতিসংঘের সামনে এই প্রথম বাংলাদেশের একুশের প্রথম প্রহরের সঙ্গে মিলিয়ে প্রবাসীসহ বিভিন্ন দেশের ভাষাপ্রেমীরা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষ্কর্য’র পাশে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদর্শন করলেন।
এ সময় তারা দৃপ্ত প্রত্যয়ে ঘোষণা করলেন একুশের চেতনা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি প্রবাস-প্রজন্মে সে চেতনার বিকাশ ঘটানোর চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার। একইসঙ্গে পাকিস্তানী কায়দায় একুশের চেতনা বিরোধী যে কোন অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে সকলে সজাগ থাকার সংকল্প ব্যক্ত করলেন।
বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মানুষের উপস্থিতিতে ভরদুপুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদর্শনের এ ঘটনা ভিনদেশী পথচারীদের কৌতুহল বৃদ্ধি করেছিল। প্রসঙ্গত, ইউনেস্কো কর্তৃক এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্লোগান হচ্ছে ‘গুণগতমানের শিক্ষা, নেতৃত্ব প্রদানের ভাষা এবং শিক্ষার সুফল’। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আইরিনা বকোভা এ উপলক্ষে বলেছেন, ‘গুণগত শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এমন শিক্ষা হচ্ছে নারী ও পুরুষের ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি। প্রতিটি সমাজে এমন শিক্ষিত ব্যক্তিরাই হচ্ছেন পুরো সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ভিত্তি।’ আর এভাবেই ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলে মনে করছে ইউনেস্কো।
স্থানীয় সময় ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১টা ০১ মিনিট অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ০১ মিনিটে উদীচীর শিল্পীদের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ সংগীতের মধ্য দিয়ে সকলে ভাস্কর্যের বেদিতে ফুল প্রদান করেন। গত ২৫ বছর যাবত জাতিসংঘের সামনে নিউইয়র্ক সময় ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ০১ মিনিটে পালিত হলেও এবার থেকে বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী তা করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নিউইয়র্কস্থ ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ এবং ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’। এ দুটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগেই এ মাসের ০১ তারিখে স্থাপিত হয়েছে ঐ ভাস্কর্য এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। তবে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস, লং আইল্যান্ড সিটি, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস এবং ব্রুকলিনের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৬টি শহীদ মিনার স্থাপন করে তাতে প্রবাসীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন আগের মতই রাত ১২টা ০১ মিনিটে।
জাতিসংঘের সামনে আগের ২৪ বছরের মতো এবারও সর্বকনিষ্ঠ শিশু আয়েনা শহীদ মিনারে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের পক্ষে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পক্ষে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কমিশনার নিশা আগরওয়্যালসহ ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, নিউইয়র্ক সিটি ও অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানসহ বেশ কটি দেশের কূটনীতিকরাও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভাষা সৈনিক আব্দুস সামাদের পরিবারও এখানে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এদিকে, আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি জ্যাকসন হাইটসে পাবলিক স্কুল- ৬৯ এর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে একুশের গ্রন্থমেলা। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
Next Post