নিউইয়র্ক থেকে: অর্ধ লক্ষাধিক বাংলাদেশীসহ ৪৫ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে ঠেলে দিলো মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণও দলীয় বিভাজনের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটালেন। অর্থাৎ ৮ বিচারপতি সমান দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি নির্বাহী আদেশ স্থবির হয়ে পড়লো।
২০১৪ সালের নভেম্বরে ওবামা এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অথবা গ্রীণকার্ডধারীদের অভিভাবক (মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী)দের মধ্যে যারা এখনও অভিবাসনের বৈধতা পাননি, তেমন ৪৫ লাখ অভিবাসীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এসব অভিবাসীকে কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্যে ‘ওয়ার্ক পারমিট’ ইস্যুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। এ আদেশের নাম ছিল ‘ডেফার্ড এ্যাকশন ফর প্যারেন্টস অব আমেরিকান এ্যান্ড ল’ফুল পারমানেন্ট রেসিডেন্টস’ তথা ‘ডাপা’।[ads1]
যারা কোন অপরাধ করেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে কঠোর শ্রম দিচ্ছেন, এমন অবৈধ অভিবাসীদের শর্তসাপেক্ষে গ্রীণকার্ড প্রদানের একটি বিল পাশের জন্যে ২০০৯ সাল থেকেই আহবান জানাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির চরম বিরোধিতার কারণে বিল পাশ হয়নি। এমনি অবস্থায় নিজের নির্বাচনী অঙ্গিকার পূরণের অভিপ্রায়ে এই নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন ওবামা। কিন্তু সেটিকেও আটকে দেয় রিপাবলিকানরা। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যসহ ২৬ রাজ্যের রিপাবলিকানরা জোট গঠন করে নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। টেক্সাসের স্থানীয় একটি আদালত ডাপার কার্যকারিতা স্থগিতের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় হোয়াইট হাউজ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ৮ বিচারপতির মধ্যে ৪ জনকে নিযুক্ত করেছে রিপাবলিকান পার্টি। এই ৪ জনের আপত্তির কারণে ৪-৪ ভোটে ঐ আদেম স্থগিত হয়ে পড়লো। ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এই বিভক্ত রায়ে বাংলাদেশীসহ অভিবাসী কম্যুনিটিতে ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। একটি মাত্র বাক্যের রুলিংয়ে মাননীয় আদালত বলেছেন, ‘সমান দুভাগে বিভক্তির নিশ্চিত প্রতিফলন ঘটলো আদালতের রায়ে।’ তবে কীভাবে তারা ভোট দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা নেই ঐ রায়ে। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিচারপতিগণ তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের লাইনে রায় প্রদান করেছেন।[ads2]
ওবামা বলেছেন, ‘আমাদের আদালতের পুরো অবস্থান বিদ্যমান সত্ত্বেও এ রুলিংয়ে তার প্রতিফলন ঘটেনি। সব ব্যপারেই পূর্ণ মতামত ব্যক্ত করার কথা। তাহলেই আমরা সেই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে পারতাম। কিন্তু সমান দু’ভাগে বিভক্ত এ রায়কে আমরা মেনে নেব। তবে এ রায়ের কোন মূল্য নেই অথবা এমন কোন গুরুত্বও নেই’।
উল্লেখ্য, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নিয়োজিত ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ এন্ড্রু হ্যানেন এর আদালতে এই মামলা চলছে। তিনি শুধু ঐ নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাই প্রদান করেননি, একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
বিভক্ত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পোল রায়ান বলেছেন, ‘আজ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিক্যাল-ওযান আজ মহিমান্বিত হলো। সুপ্রিম কোর্টের রুলিংয়ে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ অকার্যকর বলে গণ্য হলো। সংবিধান এখন স্পষ্ট যে, ‘প্রেসিডেন্টের কোন অধিকার নেই আইন তৈরীর, কেবলমাত্র কংগ্রেসের সে অধিকার রয়েছে। এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে আমাদের বড় ধরনের একটি বিজয়’।[ads1]
সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের সংবাদ প্রচারের পরই নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লসএঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, আরিজোনা প্রভৃতি স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
আসছে নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে রিপাবলিকানদের এহেন আচরণের জবাবদানের সংকল্প ব্যক্ত করেন সকলে। নিউইয়র্কে দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর সর্বস্তরের কর্মীরা এক জরুরী সভায় মিলিত হয়ে অভিবাবসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার জাতীয়ভিত্তিক সংস্থাগুলোর সাথে টেলি কনফারেন্সে মিলিত হন।ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএস সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ-সমাবেশে মিলিত হয় নতুন প্রজন্মের আমেরিকানরা।[ads2]