সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় পৈশাচিক নির্যাতনে নিহত ১৩ বছরের শিশু রাজনের পরিবারের প্রতি যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটী বাসিন্দারা সহযোগীতারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সহযোগীতার একই ভাবে সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী অলিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি রাজনের পরিবারের সাথে ছবি তুলে লন্ডন থেকে ‘জাস্টিস ফর রাজন মার্ডার’ এর নামে ২১ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানের কাছ থেকে নিহত শিশু রাজনের পরিবারকে সহযোগী করার জন্য। অথচ সেই ব্যক্তি সংগ্রহকৃত পাউন্ড রাজনের পরিবারকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছেন।
এমনকি টাকা দেয়ার কথা বলে রাজনের পিতা আজিজুর রহমান আলমের কাছ থেকে সুবিদবাজার শাখার প্রাইম ব্যাংকের একটি চেকের পাতাও নিয়ে যায় অলিউর রহমান। রাজনের নামে লন্ডনে পাউন্ড সংগ্রহ করে আত্নসাত ও প্রতারণা পূর্বক ব্যাংকের চেকের পাতা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজনের পিতা আজিজুর রহমান আলম জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়রি নং-১৯৯ দায়ের করেন।
জিডি ও রাজনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতন করার সময় ঘাতকদের একজন নির্যাতনের করার নির্মম ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরবর্তীতে ধারণকৃত ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম (ফেইসবুক) কে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে তুলাপাড় সৃষ্টি হয়। হৃদয়ে নাড়াদেয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী বিবেকবান বাঙালিদের মনে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে শুরু করে রাজনের পরিবারকে প্রবাসীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি সহযোগীতা করেন। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য চলতি বছরের ১৮ আগস্টে লন্ডন প্রবাসী পরিচয় দিয়ে রহিমা নামের এক মহিলাকে সাথে নিয়ে গাড়িযোগে রাজনের বাড়িতে হাজির হন অলিউর রহমানসহ আরো কয়েকজন।
এসময় চক্রটি রাজনের পরিবারের সাথে নানা ভাবে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে তাদেরকে সহযোগীতা করার আশ্বাসও দেয়। সেই ছবি ব্যবহার করে চক্রটি লন্ডন থেকে ২১ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করে। এমনকি টাকা দেয়ার কথা বলে চক্রটি অন্যতম সদস্য অলিউর রহমান রাজনের পিতা আজিজুর রহমান আলমের কাছ থেকে সিলেট নগরীর সুবিদ বাজার শাখার প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট নং-১৬০২১০৪০০১৪৬৯৩ এর চেকের পাতা নং-৬৬২৬৭২২ (ব্ল্যাংক) নিয়ে যায়। এরপর চক্রটি হাওয়া হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে রাজনের পিতা আলম তার নিযুক্ত আইনজীবি মশরুর চৌধুরী শওকতকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি রাজনের পিতাকে দেয়া অলিউর রহমানের মোবাইল ফোনে ফোন করে তাকে ডেকে আনেন। এরপর সে রাজনের পিতাকে ১লাখ টাকাদিয়ে অবশিষ্ট টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গেলে অলিউর রহমান আর আসেনি। এমনকি পূর্বে যে নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাও পরে বন্ধ হয়ে যায়।
রাজনের পিতা আজিজুর রহমান আলম জানান,অলিউর রহমান নামের ওই ব্যক্তি ‘জাস্টিস ফর রাজন মার্ডার’ নামে লন্ডন প্রবাসীদের কাছ থেকে ২১হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশে যার পরিমান প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। আমাদেরকে সাহযোগীতার কথা বলে বিবেকবান প্রবাসীদের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করে তা আত্মসাত করে ফেলে চক্রটি। এমনকি টাকা দেয়ার কথা বলে অলিউর রহমানসহ তার সাথে থাকা রহিমা নামের এক নারীসহ কয়েকজনকে বাড়িতে এসে এক ছবি তুলেন। লন্ডনে সংগ্রহকৃত টাকা ব্যাংক একাউন্টে পাঠাবেন বলে তার আমার কাছ থেকে সুবিদ বাজার শাখার প্র্রাইম ব্যাংকের একটি খালি চেক নিয়ে যান। চেক নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর অলিউর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন।
রাজন হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি মশরুর চৌধুরী শওকত বলেন, রাজনের বাবা এ বিষয়ে আমাকে জানানোর পর আমি অলিউর রহমানের ফোনে কথা বলার পর সে তখন ১লাখ টাকাদেয়। এবং অবশিষ্ট টাকা দেয়ার আশ্বাসদেয়। এমনকি এবিষয়টি সাংবাদিকদের না বলার জন্য অনুরোধ করে কিন্তু পরে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তবে আমি লন্ডনের কিছু প্রবাসীদের এ বিষয়ে তাদের অবগত করেছি ।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, লন্ডনে ‘জাস্টিস ফর রাজন মার্ডার’ এর নাম ব্যবহার করে অলিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি পাউন্ড সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেই পাউন্ড রাজনের পরিবারকে দেয়ার কথা বলে ব্যাংকের চেকের পাতাও নিয়ে যায় সেই ব্যক্তি। এঘটনায় রাজনের পিতা একটি সাধারণ ডায়রিও করেন। পুলিশ এখনও তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।