মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে গত ১১ মে সন্ধান পাওয়ার পর এই প্রথম বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের মুখের কথা শোনা গেল। বললেন, ‘চোখ ও হাত বাঁধা ছিল। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ওরা ফেলে রেখে গেছে শিলংয়ে’। শিলং সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল (ইউটিপি) প্রিজন সেল থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে শারীরিক পরীক্ষার জন্য বের করা হয় সালাহউদ্দিন আহমদকে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই হাসপাতালের মূল ভবনে। সেখানে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। এ সময় হাসপাতালের বারান্দায় অপেমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। ‘এখনো জীবিত আছি’- এভাবেই সাংবাদিকদের সাথে কথা শুরু করেন তিনি। কিভাবে শিলং এলেন, কিছু মনে করতে পারেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছি…। আমি তো… চোখ বান্ধা ছিল আমার, হাত বান্ধা ছিল। একটা লং জার্নি। মনে হয় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার হবে। দুই ঘণ্টা হয়তো স্টপেজ ছিল, মনে হয়। এখানে শিলং গলফ কোর্সের পাশে আমাকে ফেলে রাখে। তারপর… কিছু লোককে বললাম, আমাকে একটু পুলিশ স্টেশনের দিকে নিয়ে যাও অথবা পুলিশকে খবর দাও, আমার এই এই অবস্থা।’ স্বেচ্ছায় থানায় এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ… তখন তারা পুলিশকে কল করল। আমি গেলাম। তো তাদেরকে আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা হয়তো মনে করেছে, আমি মেন্টাল পেশেন্ট।’ দেশে ফিরতে চান নাকি আরো চিকিৎসা করাতে চান- জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেশে তো এখন রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা গভর্নমেন্টের উচিত হয় নাই। আমি তো কোনো, মানে সাজাপ্রাপ্ত দাগি অ্যাবসকন্ডিং (ফেরারি) কোনো আসামি না। তো কেন করছে, আমি তো জানি না।’ সালাহউদ্দিন জানান, দেশে ফিরতে চান তিনি। কাঁদলেন সালাহউদ্দিন- হাসিনা আহমদ সালাহউদ্দিন আহমদকে যখন সিটিস্ক্যান করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার সাথেই ছিলেন বিএনপির সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, গায়ে খোপ খোপ খয়েরি-সাদা চাদর পেঁচানো সালাহউদ্দিনকে এ সময় খুব দুর্বল মনে হচ্ছিল। ঠিকভাবে হাঁটতে পারছিলেন না। একজন পুলিশ সদস্যের হাতে ভর দিয়ে তিনি চলছিলেন। গত মঙ্গলবার থেকে সিভিল হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে সালাহউদ্দিনের। শিলংয়ের পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিটিস্ক্যানসহ অন্য কয়েকটি পরীক্ষার রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে তাকে ঠিক কখন বা কবে আদালতে হাজির করা হবে সে বিষয়টি। গত ১২ মে সালাহউদ্দিনকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন শিলংয়ের গলফ কোর্স এলাকায় তার সন্ধান মেলে। নিজেকে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির বড় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী পরিচয় দেয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ তার কথা বিশ্বাস করতে না পেরে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকায় পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সিভিল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে সালাহউদ্দিনের কিডনি ও হার্টসহ নানা জটিলতার চিকিৎসা চলছে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় ফরেনার্স অ্যাক্টে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেঘালয় পুলিশ। তবে শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ থাকায় নিয়ম অনুযায়ী এখনো তাকে আদালতে তোলা যায়নি।