চট্টগ্রামের নদী,খাল ও নালাগুলোতে মিলছে প্রায় সময় লাশ। ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে পাওয়া লাশগুলোর ব্যাপারে পুলিশ তদন্তে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই বেশির ভাগ লাশের পরিচয় মিলছে না। সম্প্রতি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে পাঁচটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রায়ই অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নগরবাসী। তবে পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের দাবিÑ ‘অন্যত্র খুন করে লাশ নদী-খালে ভাসিয়ে দিচ্ছে, পরে তা পানির স্রোতের সাথে চট্টগ্রাম নগরে পৌঁছছে।’
গতকাল সোমবার কর্ণফুলী নদীর শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অদূরে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
কর্ণফুলী থানার ওসি মো: কামরুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অদূরে নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে রাতে লাশটি উদ্ধার করে। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, চার-পাঁচ দিন আগে লোকটি মারা গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
গত ৯ মে কর্ণফুলী থানার ডাঙ্গারচর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী ফজলের বাড়ির পাশে কর্ণফুলী নদীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি লাশ পানিতে ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী। স্থানীয় লোকজন লাশটি ভাসতে দেখে শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলেও পুলিশ লাশটি উদ্ধার করতে যায়নি। নদী এলাকাটি বন্দর থানাধীন হওয়ায় কর্ণফুলী থানা পুলিশ খবর পেয়েও লাশ উদ্ধার করতে যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। লাশের গায়ে বেগুনি রঙের একটি হাফ শার্ট, হাতা-পা বাঁধা মুখে টেপ লাগানো ও বস্তাবন্দী অবস্থায় ছিল।
এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার সকালে নদীর পাড়ে বস্তাভর্তি লাশটি দেখে বস্তার মুখ খুলে লাশটি দেখতে পাওয়া যায়। লাশটি আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম হৃদয় নয়া দিগন্তকে জানান, স্থানীয় লোকজন লাশটি দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হলেও বিকেলেও লাশটি উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী থানা অফিসার ইনচার্জ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হলেও লাশ পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
গত ১৬ মে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার নাছিরাবাদ এলাকা থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে নাছিরাবাদ চা বোর্ডের সামনে থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে উদ্ধার তিন দিন পরও লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ ।
এ ব্যাপারে বায়েজিদ বোস্তামি থানার (এসআই) খালেদ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, নিহত ওই যুবকের পরিচয় এখনও আমরা পাইনি। তবে তদন্ত চলছে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে নগরের চকবাজার থানার গুলজার টাওয়ারের পাশে একটি গলির নালা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চকবাজার থানার এএসআই মো: ইকবাল হোসাইন বলেন, লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের লোকজন থানায় খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। তিনি আরো বলেন, লাশের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া গত তিন মাসে চট্টগ্রামে ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৭ মে রাতে নগরীর মুরাদপুরে গ্রিল কেটে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ঢুকে তিন যুবক। ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী ইব্রাহিম ঘুম থেকে জেগে উঠলে তারা তাকে গলা কেটে হত্যা করে। একই দিন নগরীর সদরঘাট এলাকায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা, এবং ১৩ মে মির্জারপুল এলাকায় বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মাত্র একটি ঘটনা তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। অন্য সব খুনের ঘটনার রহস্যও শিগগিরই উদঘাটিত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১৬ মে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল জানান, অচিরেই এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের হবে। বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে হত্যা, ব্যাংকে ঢুকে নিরাপত্তারী খুন এবং নিজ বাসায় সতীনের হাতে গৃহবধূ খুনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিএমপি কমিশনার এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।’