সহজপ্রাপ্তির কারণে ফের মানুষের হাতে ফিরে এসেছে নিষিদ্ধ পলিথিন। প্রকাশ্যেই পলিথিন উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন সবাই। টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনাসহ ১৯ দফা সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কিন্তু অজানা কারণে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে প্রথম পলিথিনের বাজারজাত ও ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু ব্যবহারের পর এটি যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় তা পরিবেশ বিপর্যয়কারী পণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হয়। কিন্তু সুষ্ঠু তদারকির অভাবে সর্বত্র নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে, ভরাট হচ্ছে নদী এবং সড়কগুলো হয়ে পড়ছে অপরিচ্ছন্ন।
সূত্র মতে, দশম সংসদের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কার্যক্রমের শুরু থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ জমা হতে থাকে। গত ২৩ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিষিদ্ধ পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে করণীয় নির্ধারণে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য টিপু সুলতানকে আহ্বায়ক করে একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আওয়ামী লীগের সদস্য নবী নেওয়াজ ও স্বতন্ত্র সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে সদস্য রাখা হয়। সাবকমিটি সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন ও কয়েক দফা বৈঠক শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে মূল কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। গত ৭ মে মূল কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি অনুমোদন করে সাবকমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ দিতে মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
সাবকমিটির আহ্বায়ক টিপু সুলতান বলেন, ‘অলিগলিতে অসংখ্য কারখানা নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। আমরা পলিথিন নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বা অন্য কিছু ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য করতে পারিনি।’
কমিটি সূত্র জানায়, সাবকমিটির প্রতিবেদনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে টাস্কফোর্স গঠন করে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও মোবাইল কোর্টের সহায়তায় প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন বন্ধের পাশাপাশি বণ্টনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি করা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপারিশে জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে আকর্ষণীয় প্রচারণার জন্যও বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা, স্বল্প মূল্যে বাজারে বিকল্প ব্যাগ সরবরাহ, পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত)-২০০২ অনুযায়ী, ১০০ মাইক্রোনের কম পুরুত্বের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ছয় মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।