ডেস্কঃ মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের উদ্ধার করা গলাকাটা লাশ সীতাকুণ্ডের এক নারী তার নিজের মেয়ে সীমা আক্তার বলে শনাক্ত করে। যথারীতি হাসপাতাল মর্গে থেকে লাশ বুঝে নিয়ে দাফনও করা হয়। সীমার মায়ের দাবি অনুযায়ী পুলিশ থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার স্বামীকে গ্রেফতারের জন্য বেশ কয়েকদফা অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু দাফনের চার দিন পর রোববার দুপুরে ‘নিহত’ সীমা আক্তার নিজে জোরারগঞ্জ থানায় এসে বলছে, ‘ওই লাশ আমার নয়, আমি বেঁচে আছি।” এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আরেফুল ইসলাম জানান, সীমা আক্তার রোববার থানায় এসে বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। তার মায়ের ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। আমরা উদ্ধারকৃত লাশের ব্যাপারে নতুন করে তদন্ত শরু করছি। দেশের সকল পুলিশ স্টেশনে ওই লাশের ছবি পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাস্তার মাথা থেকে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পরদিন বুধবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) মর্গে ওই লাশ শনাক্ত হয়। পাশ্ববর্তী উপজেলা সীতাকুণ্ডের ইয়াকুব নগর গ্রামের মাস্টার পাড়ার কবির মাস্টার বাড়ির রোকেয়া আক্তার লাশ দেখে নিজের মেয়ে সীমা আক্তারের লাশ বলে দাবি করে। পরে পুলিশ ওই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
পরিবারের আর্থিক দূরবস্থার কারণে ময়নাতদন্ত শেষে ১৮ ডিসেম্বর বুধবার চট্টগ্রামের আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কবরস্থানে লাশটি দাফন করা হয়। এ ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় ১৮ ডিসেম্বর একটি হত্যা মামলা হয়। কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর রাতে সীমা আক্তারের মা রোকেয়া বেগম প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মোবাইলে জানায়, “আমার মেয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছে।”
রোববার দুপুরে মেয়েটি নিজে থানায় এসে পুলিশের কাছে বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সীমা আক্তারের স্বামী মিরসরাই পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ্ আলমের ছেলেআবুল কালাম রাজু।
রোববার সীমা আক্তারের মা রোকেয়া আক্তার জানান, লাশ দেখে আমার মেয়ের মতোই মনে হয়েছিল। তাই আমি বুঝতে পারিনি। এখন আমার মেয়ে ফিরে আসায় বুঝতে পারছি ওই লাশ আমার মেয়ের নয়।
সীমা আক্তার বলেন, “আমি চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টে চাকরি করি। মায়ের কাছে আমার মোবাইল নম্বর না থাকায় বিষয়টি এতদূর গড়িয়েছে। ঘটনার সময় তিন দিন আমার সঙ্গে মায়ের যোগাযোগ না থাকায় এমনটি হয়েছে।”
জোরারগঞ্জ থানার জ্যেষ্ঠ উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি পুলিশকে কিছুটা অস্বস্থিতে ফেলেছে। নতুন করে মামলার গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করা হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর মিরসরাইয়ের ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় গ্রামের চেয়ারম্যান রাস্তার মাথা থেকে গৃহবধূ সীমার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন দুপুরে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তারপর দিন বুধবার লাশের পরিচয় মেললে কথিত পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।