আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ঠিকমতো যত্ন না নিলে শিশু মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে। তাই সচেতন থাকার জন্য শিশুর রোগ জীবাণুর নাম ও লক্ষণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী।
লক্ষন
জম্মের ১ম ও ২য় দিন শিশু স্বাভাবিক ভাবে কাঁদতে পারে এবং বুকের দুধ টেনে খেতে পারে। জন্মের ৩-২৮ দিনের মধ্যে শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং শিশু বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, শিশুর মুখ ও চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং জোরে কাঁদতে পারে না। শিশুর খিঁচুনী হয় এবং শরীর পেছনের দিকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়।
ভয়াবহতা
নবজাতকের ধনুষ্টংকার শিশুমৃত্যুর একটি প্রধান কারন। এই রোগের চিকিৎসা করা অত্যন্ত কষ্টকর। এই রোগে আক্রান্ত নবজাতক প্রায়ই মারা যায়।
প্রতিরোধ
গর্ভবর্তী ও সন্তান ধারনক্ষম সকল মহিলাকে যথা শীঘ্র সম্ভব ৫ ডোজ টিটি টিকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দিয়ে নবজাতকের ধনুষ্টংকার রোধ করা যায়। এছাড়া নিরাপদ প্রসব ও নাভী কাটার জন্য জীবানুমুক্ত ব্লেড ব্যবহার করতে হবে।
ডিপথেরিয়ার কারন, রোগ জীবানুর নাম, লক্ষন, ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ
কারন
ক্ষুদ্র এক প্রকার জীবাণু ডিপথেরিয়া রোগাক্রান্তশিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ জীবানু যখন সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তখন এই রোগ দেখা দিতে পারে।
জীবাণুর নাম
করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরী Corynebacterium diptherae) ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষন
১-৩দিন:
- শিশু খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে
- ঠিক মতো খায়না এবং খেলাধুলা করেনা
- শিশুর জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দেয়
- গলা ফুলে যায় এবং কন্ঠ নালী বা গল দেশের ভিতরে সরের মত সাদা আস্তরন পড়ে।
৪-৬দিন:
- শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে
- কন্ঠ নালীর গ্রন্থিগুলি খুব বেশী ফুলে যায়
- কন্ঠ নালীতে ধুসর রং এর সুস্পষ্ট আস্তর পড়ে
- আস্তরটি শ্বাস নালীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শ্বাস কষ্টের সৃষ্টি করে।
ভয়াবহতা
এরোগ হৃৎপিন্ড এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করতে পারে এবং শিশুর মৃত্যু ঘটাতে পারে।
প্রতিরোধ
শিশুর জম্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা একমাস পরপর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করে। প্রথম ডোজ ডিপিটি টিকা দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে।
হুপিং কাশির কারন, রোগ জীবানুর নাম, লক্ষন, ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ
কারন
হুপিং কাশিতে আক্রান্ত শিশু হাঁচিকাশি দেওয়ার সময় বাতাসের মাধ্যমে এইরোগ ছড়ায় এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়ায়।
জীবাণুর নাম
বড় ডেটলা পারটুসিস (Bordetela Pertusis) নামক ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষন
১ম সপ্তাহ-শিশুর জ্বর হয়, নাক দিয়ে পানিপড়ে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়, কাশি দেখা দেয়।
২য় সপ্তাহ-কাশি মারাত্মক আকার ধারন করে। শিশু যখন কাশে তখন তার খুব কষ্ট হয় এবং চোখ স্ফীত ও লাল হয়ে যায়। কাশির পর শিশু হুপ শব্দ করে শ্বাস নেয়। অনেক সময় বমিও হয়। ছয় মাসের কম বয়স্ক শিশু হুপ শব্দ ছাড়াও কাশতে পারে এবং বমি করতে পারে। যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলে তাহলে হুপিংকাশি বলে অনুমান করা যেতে পারে।
৩ থেকে ৬ সপ্তাহ-কাশি ধীরে ধীরে কমে যায়।
ভয়াবহতা
হুপিংকাশির ফলে শিশু দূর্বল হয়ে যায় এবং অপুষ্টিতে ভোগে। শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে শিশুর চোখে রক্তজমাট বেঁধে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
প্রতিরোধ
শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে ২৮ দিন বা এক মাস অন্তর অন্তর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিয়ে শিশুকে হুপিংকাশি থেকে রক্ষা করা যায়। প্রথম ডোজ দেয়ার সব চেয়ে ভালো সময় হলো শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে। ৬ মাস বয়সের মধ্যেই শিশু মারাত্মক ভাবে হুপিংকাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে সে কারণে ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই ডিপিটি দেয়া শুরু করা অত্যন্ত জরুরী।
পোলিও (পোলিও মাইলাইটিস) এর কারন, রোগ জীবানুর নাম, লক্ষন, ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ
কারন
আক্রান্ত শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি খেলে বা আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে।
জীবানুর নাম
পোলিও ভাইরাস (Polio virus)
লক্ষন
১-৩দিন:
- শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয়।
১-৫ দিন:
- মাথা ব্যাথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়
- জ্বর থাকে
- শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়
- শিশু দাঁড়াতে চায় না
- উঁচু করে ধরলে আক্রান্ত পায়ের পাতা ঝুলে পড়ে
- দাঁড়া করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং নাড়াচড়া করতে পারে না
- শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হয় এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
ভয়াবহতা
শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে য়ায়। ফলে আক্রান্ত অঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। আক্রান্ত অঙ্গের মাংস পেশী চিকন হয়ে যায়। শ্বাস প্রশ্বাসের পেশী অবশ হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারা ও যেতে পারে।
প্রতিরোধ
একমাস পর তিন ডোজ এবং হামের টিকা দেওয়ার সময় আরো একবার অর্থাৎ মোট চারবার পোলিও টিকা শিশুর এক বছর বয়সের ভিতরে খাওয়ানো হলে তা শিশুর দেহে পোলিও রোগ প্রতিরোধ করে। প্রথম ডোজ দেয়ার সব চেয়ে ভালো সময় শিশুর ৬ সপ্তাহ বয়স। যদি কোন শিশু ক্লিনিক বা হাসপাতালে জন্ম গ্রহন করে তাহলে তাকে জম্মের পরপরই এক ডোজ পোলিও টিকাদিতে হবে। এটাকে অতিরিক্ত ডোজ বলে গণ্য করতে হবে। এবং শিশুর ৬ সপ্তাহ বয়সে থেকে নিয়মিত চার ডোজের সিডিউল শুরু করতে হবে।
হাম এর কারন, রোগ জীবানুর নাম, লক্ষন, ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ
কারন
হামে আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে এই রোগের জীবানু বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং হাম রোগ সৃষ্টি করে।
জীবানুর নাম
হাম ভাইরাস (Measles virus)
লক্ষন
১-৩দিন:
- বেশী জ্বর, সর্দি, কাশি
- চোখ লাল হয়ে যায় এবং পানিতে টলটল করে
চতুর্থ দিন
- জ্বর কমে আসে
- মুখে এবং শরীরে লালচে দানা দেখা দেয়
হামে দানা উঠার ৩/৪ দিন পর দানা কালচে হয়ে এক সময় খুসকির মতো হয়ে ঝরে যায়।
ভয়াবহতা
হামের ফলে শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কান পাকা রোগ হতে পারে। শিশুর রাত কানা রোগ দেখা দিতে পারে, এমন কি চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। হামের নানা জটিলতার কারণে অনেক শিশু মারাও যায়।
প্রতিরোধ
শিশুর ৯ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তাকে এক ডোজ হামের টিকা দিলে সে হাম রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে এই টিকা অবশ্যই এক বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেওয়া উচিৎ। পুষ্টিহীন শিশুরা হামের পরে মারাত্নক রোগ পরবর্তী জটিলতার সম্মুখীন হয়। পুষ্টিহীন শিশুদের পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার দিলে তা তাদেরকে হাম পরবর্তী অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। হামে আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই এক ডোজ ভিটামিন- এ খাওয়াতে হবে।
শিশুদের যক্ষ্মার কারন, রোগ জীবানুর নাম, লক্ষন, ভয়াবহতা ও প্রতিরোধ
কারন
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত লোকের সাথে ঘনিষ্ট সংস্পর্শে, আক্রান্ত লোক যখন কাশে তখন তার থুথুর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
জীবানুর নাম
মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterum Tuberculosis) ।
লক্ষন
- অল্প অল্প জ্বর ও কাশি, ক্ষুধা কমে যায়, দুর্বলতা
- গ্রন্থি ফুলে যায়, পরে পেকে যে গ্রন্থি বগল বা ঘাড়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
- অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে ওজন কমে যায়। হাড় যেকোন হাড়ের জোড়া ফুলে যায় এবং অচল হয়ে যায়।
- মেরু দন্ডে যক্ষ্মার ফলে বাঁকা হয়ে যায়, ব্যাথা হয়।
- মস্তিষ্ক (টিভি মেনিনজাইটিস)-এর ফলে মারাত্মক মাথা ব্যথা, অচেতনতা, ঘাড় শক্ত ও খিঁচুনি হয়।
ভয়াবহতা
সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হতে পারে এবং রোগ ছড়াতে পারে।
প্রতিরোধ
জম্মের পরপরই যত শীঘ্র সম্ভব বিসিজি টিকা দিলে তা শিশুর দেহে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে জন্মের পরপর বিসিজি দেয়া না হলে, শিশুর এক বৎসর বয়সের মধ্যেই এই টিকা গ্রহন করা উচিৎ।
হেপাটাইটিস-বি
কারন
- হেপাটাইটিস-বি লিভারের একটি মারাত্মক রোগ, যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এমনকি অনেক বছর পরও লিভারে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে।
- উপযুক্ত পরিবেশে মানবদেহের বাইরেও এই ভাইরাস কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে।
- হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত রোগীর রক্ত এবং দেহ রসের মাধ্যমে ছড়ায়।
সংক্রমন
এই ভাইরাস একজন হতে আরেক জনের শরীরে নিম্ন লিখিত উপায়ে সংক্রমিত হয়ঃ
- জন্মের সময় নবজাতক তার মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। মা যদি পূর্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত থাকে সে ক্ষেত্রে শিশুটি যখন তার মায়ের রক্ত বা জরায়ু হতে নিঃসরিত রসের সংস্পর্শে আসে তখনই সংক্রমিত হয়। বুকের দুধের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় না।
- খেলাধূলার সময় আঘাতের কারণে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু হতে রক্ত বা অন্যান্য দেহ রসের মাধ্যমে সুস্থ্য শিশুতে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
- ইনজেকশন দেবার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করলে বা দূষিত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে একজন হতে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে।
- অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
লক্ষন
নবজাতক এবং শিশুরাই জীবনের শুরুতেই প্রধানতঃ এ রোগে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের মধ্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষন প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু পরবর্তীতে এসব শিশুরাই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বাহক হিসেবে থাকে।
প্রথম বারের মত যখন একজন কিশোর/কিশোরী বা প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন তার মধ্যে সাধারনতঃ নিম্নলিখিত লক্ষন সমূহ দেখা যায়:
- চামড়া ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। একে জন্ডিস বলে
- প্রস্রাবের রং হলুদ হয়
- পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে জ্বর হয়
- ক্ষুধা মন্দা এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে
- মাংস পেশী এবং হাড়ের সংযোগ স্থলে (গিটে) ব্যথা হয়
- আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময় অস্বস্তি অনুভব করে
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে,হেপাটাইটিসের যেকোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেই জন্ডিস দেখা যায়। আর হেপাটইটিস-বি ভ্যাকসিন শুধুমাত্র ‘বি’ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।সুতরাং নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন দেয়ার পর আর জন্ডিস হবেনা। কারন ‘বি’ভাইরাস ছাড়াও বাকী ৪ প্রকার (হেপাটাইটিস ‘এ’,‘সি’,‘ডি’এবং ‘ই’) ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জন্ডিস হতে পারে।
ভয়াবহতা
হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরাই ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস –বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বাহক হওয়ার ক্ষেত্রে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ এবং অন্যদের মাঝে ভাইরাস সংক্রমিত করে। যার ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণে রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে।
প্রতিরোধ
৩ ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিলে এটি শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে। শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই হেপাটাইটিস-বি টিকার ১ম ডোজ দিতে হবে এবং ২৮ দিন বা ১ মাস পরে ২য় ও ৩য় ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিতে হবে। (হেপাটাইটিস-বি টিকা ডিপিটি টিকার সাথে দেয়া হয়)।
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি (হিব)
কারনঃ
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি একধরনের ব্যাকটিরিয়া যা শিশুদের দেহে মারাত্মক সংক্রমন ঘটায়।
ভয়াবহতা
- এ সংক্রমণের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাকটেরিয়াল ম্যানিনজাইটিস (ব্যাকটেরিয়া জনিত মস্তিষ্কের সংক্রমন) এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া। এছাড়া এ ব্যাকটেরিয়া রক্ত, অস্থিসন্ধি, হাড়, গলা, কান এবং হৃৎপিন্ডের আবরণের সংক্রমন ঘটায়।
- হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘‘এ,বি,সি,ডি,ই,এফ’’এই ৬ ধরনের হয়ে থাকে। তবে শিশুদের মারাত্মক সংক্রমণের জন্য ৯০% বেশী ক্ষেত্রে হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি দায়ী।
- সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার পরেও শিশু মৃত্যু বরন করতে পারে।
কারা বেশী ঝুঁকিপূর্ণ
- হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি রোগটি সাধারনত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের হয়ে থাকলেও ৪ থেকে ১৮ মাসের শিশুরাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশী ঝূঁকিপূর্ণ।
- শিশুর জন্মের পর পর মায়ের দুধের মাধ্যমে এরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জন্মালেও ২-৩ মাসের মধ্যে তা কমে যায়, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে এরোগের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে।
- সাধারনত ৫ বছরের বড় শিশুরা বা বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয় না।
কিভাবে এ রোগ ছড়ায়
- এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
- সুস্থ শিশু আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এমনকি আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রীর (তোয়ালে, খেলনা ইত্যাদি) মাধ্যমে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগের সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধ
তিন ডোজ হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি ভ্যকসিন দিয়ে শিশুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
টিকা
- ইপিআই কার্যক্রমে হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি ভ্যাকসিন অর্ন্তভূক্তির ফলে ডিপিটি এবং হেপাটাইটিস-বি টিকা আলাদা আলাদা না দিয়ে সমন্বিত ভাবে ১ টি টিকার মাধ্যমে ৫ টি রোগের (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি) বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই টিকাকে পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন বলা হয়।
- পেন্টাভ্যালেন্টটিকা শুধুমাত্র যেসকল শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিন পূর্ণ হয়েছে তাদেরকে ১ম ডোজ দিয়ে শুরু করতে হবে এবং পরবর্তীতে ৪ সপ্তাহ পর পর ২য় ও ৩য় ডোজ টিকা দিয়ে মোট ৩ ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
- সাধারনত ৪-৫ বছর বয়সের মধ্যে শিশুরা স্বাভাবিক ভাবে এরোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তাই বড়দেরকে সাধারনত এইরোগের জন্য টিকা দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
- যদি শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিন পূর্ণ হয় তবে এলাকার নিকটস্থ যেকোনো টিকা দান কেন্দ্র থেকে শিশুকে এই টিকা দিতে হবে।
টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- এ টিকার সাধারন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে সামান্য জ্বর হতে পারে
- টিকা দেয়ার স্থানে সামান্য লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া ও অল্প ব্যথা করতে পারে। এসব আপনা আপনি ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সেরে যাবে।
এ টিকা কখন দেয়া যাবে না
এ টিকার সাধারনত কোনো মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। তবে কখনো কখনো পারটুসিস (হুপিং কাশি) উপাদানের কারণে খিঁচুনী হতে পারে। যদি খিঁচুনী হয় তবে তাকে পুনরায় পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন না দিয়ে, ৪ সপ্তাহ পর ১ ডোজ টিটি টিকা দিতে হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন.১. ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দিয়ে কোন ছয়টি রোগকে প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তর. ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দিয়ে যে ছয়টি রোগ প্রতিরোধ করা যায় সেগুলো হলোঃ ধনুষ্টংকার, যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, হাম, হুপিংকাশিএবং পোলিও।
প্রশ্ন.২. টিকা কাদেরকে দেয়া হয়?
উত্তর. এক বৎসরের কম বয়সের শিশুরা এবং সন্তান ধারনক্ষম (১৫-৪৯ বৎসর) মহিলারাই হচ্ছে টিকা দানের প্রধান লক্ষ্য (টার্গেটগ্রুপ বা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী) ।
প্রশ্ন.৩. ধনুষ্টংকারের লক্ষনগুলোকিকি?
উত্তর. জম্মের ১ম ও ২য় দিন শিশু স্বাভাবিক ভাবে কাঁদতে পারে এবং বুকের দুধ টেনে খেতে পারে। জন্মের ৩-২৮ দিনের মধ্যে শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং শিশু বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, শিশুর মুখ ও চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং জোরে কাঁদতে পারে না। শিশুর খিঁচুনী হয় এবং শরীর পেছনের দিকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়।
প্রশ্ন.৪. ধনুষ্টংকার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তর. গর্ভবর্তী ও সন্তান ধারনক্ষম সকল মহিলাকে যথা শীঘ্র সম্ভব ৫ ডোজ টিটি টিকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দিয়ে নবজাতকে রধনুষ্টংকার রোধ করা যায়।এছাড়া নিরাপদ প্রসব ও নাভী কাটার জন্য জীবানু মুক্ত ব্লেড ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন.৫. পোলিও কেন হয়?
উত্তর. আক্রান্ত শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি খেলে বা আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে।
প্রশ্ন.৬. ডিপথেরিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তর. শিশুর জম্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা এক মাস পরপর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিফথেরিয়া থেকে রক্ষা করে। প্রথম ডোজ ডিপিটি টিকা দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে।