শিশির মোজাম্মেলঃ যখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কোন ভাবেই দেশের চলমান সঙ্কট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না, ধুম্রজালের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে যখন মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা, ঠিক সে সময় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানে কেন নিশ্চুপ ?
যখন কেন্দ্রীর নেতারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখনই তৃণমূল নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন অপেক্ষায় রয়েছে এ সময়ও কেন এই প্রিয় নেতা নীরব ভুমিকায় ? তাই তৃণমুল কর্মীরা বলছেন তারেক রহমানের নীরবতা দেশকে কাঁদায় ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেষ্ঠ্য সন্তান তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর তারিখে। তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনেও তারেক রহমান মা বেগম জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তারেক রহমানের সক্রিয় আগমন ঘটে ।
২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির একজন জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্মপ্রাপ্ত হন। দলের উর্দ্ধতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন।
বাংলাদেশের স্তবির ও ঝিমিয়ে পড়া এ রাজনৈতিক অঙ্গনকে বেগবান ও নতুন দিগন্ত দিতে তরুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের বিকল্প নেই।
দেশবাসীকে প্রকৃত রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ও সচেতন করার জন্য এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তৃণমূলকে সহযোদ্ধা হিসেবে সম্পৃক্ত করার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে বহুদূর এগিয়েছেন তারেক রহমান।
তাঁর রাজনৈতিক পরিকল্পনা আর গুনাবলী বাংলাদেশের বৃহত্তম জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক দল বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক সৌরভ বইতে থাকে।সাংগঠনিক দক্ষতার গুণে বাংলাদেশের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী তরুন রাজনৈতিক নিশানায় পরিনত হয়েছেন তিনি।
তাঁর রচিত এম্পাওয়ারম্যান্ট অব দ্য গ্রাসরুট পিপল গ্রন্থের যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণের(দ্বিতীয়) মোড়ক উন্মোচনে এ মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরাও।
অতিথিরা আরো বলেন, ১/১১ পরবর্তী সময়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেও তারেক রহমান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতোই দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র বিরত থাকেননি।তাঁকে শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকেও কোনভাবেই আলাদা করা যায়নি।
প্রবাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তিনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের রোডম্যাপও রচনা করেছেন।কিন্ত বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বাংলার রাজনীতি নিয়ে গবেষণা লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগের এখনই মূখ্য সময় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তিনি দেশে না থাকলেও নেতাকর্মীদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করার জন্য যথার্থভাবে উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন জাতীয়তাবাদে উজ্জিবীতদের।
আর সে কারনেই দলে মতভেদের কারনে ভিন্ন ভিন্ন অংশ থাকলেও তাঁর ক্ষেত্রে দলের বর্ষীয়ান নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কোন নেতার্মীর মধ্যে কোন রকম বিরোধ নেই। আর সে কারনেই সরকার পতনের আন্দোলন, সংগ্রামকে বেগমান ও ফলপ্রসূ করতে তারেক রহমাকের কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের সেকেলে রাজনীতিতে আধুনিক রুপকার তারেক রহমান এক নতুন জাগরণ সুষ্টি করেছেন উন্নয়নপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমান তার সাংগঠনিক দক্ষতার গুণে বাংলাদেশের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্ব তৃণমূল কর্মীদের মূল্যায়ন মন ছুঁয়ে যায়।
সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সংগঠনের কাজ কর্মে সম্পৃক্ত করার অনন্য এক নজীর স্থাপন করতে বিশেষ ভূমিকার দাবিদার। অনেকের মতে রাজণীতিতে তাঁর এ কৃতিত্বে দক্ষিন এশিয়ার এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন তিনি। তাই একজন জনপ্রিয় সংগঠক হিসেবে তারেক রহমানের কোন বিকল্প কাউকেই মনে করেন না দলের নেতাকর্মীরা।
দেশবাসী যেমনটি পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ, ঠিক সেই লক্ষেই একইভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন সাধনের পথে এগিয়ে নিতেও তারেক রহমান অতুলনীয়। বাংলাদেশের তারেক রহমান শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ভূয়সী প্রসংশার দাবি রাখে।
সবকিছু চিন্তা করে তারেক রহমানের বহুদিনের গবেষণার মূল লক্ষ একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তারেক রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভদ্ধ নেতাকর্মীদের এ সংকটাপন্ন মূহুর্তে দলের তথা দেশের পাশে দাঁড়ানো আর এক মহান রাজনৈতিক নেতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর পর যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমান। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য আসার পর আর কখনোই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি তাঁর।
সম্প্রতি ২০ মে পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে অয়োজিত যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র নেতাকর্মীদের এক সভায় তিনি উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তারেক রহমান।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিকরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই,নেই আইনের শাসন,মানুষের সভা-সমাবেশের অধিকার নেই,নেই মানবাধিকার।
তিনি বলেন, ১/১১-এর দুর্যোগেও ভেঙ্গে না পড়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রমান করেছেন কিভাবে দলকে ধরে রাখা যায়। বর্তমান সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে দেশে যারা অবস্থান করছেন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
দেশকে যারা ভালবাসেন,দেশের মানুষকে যারা ভালবাসেন তারা কেউই বর্তমান এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারে না। যারা বিএনপিকে ভালবাসেন বা দলকে ভালবাসেন, তারাই শুধু নন, দেশকে যারা ভালবাসেন, দেশের মানুষকে যারা ভালবাসেন তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে দেশের প্রতি।
তিনি বলেন, রাতের আধারে মতিঝিলে লাইট নিভিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সরকার এতগুলো লোক হত্যা করল।
মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, তাই বলে এত গুলো মানুষকে এভাবে কেউ মেরে ফেলতে পারে না। এটা কোন সভ্য দেশে চলতে পারে না। আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা যারা বলেন তাদেরকে বর্তমান এই পরিস্থিতি তুলে ধরার দায়িত্ব হচ্ছে যুক্তরাজ্যে বসবাসকরী নেতাকর্মীদের।
তারেক রহমান দেশের রাজনীতিতে সক্রীয় হলে অনেকের রাজনীতির পথ যে রুদ্ধ হয়ে যাবে তা টের পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তাইতো অনেকদিন চুপ করে থাকা তারেক রহমানের নরাচড়া দেখে মাথা ঘুরেছে আওয়ামী লীগের।
এতো দিন তারেক রহমান কে নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যথা ছিল না তাদের। বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা থাকলেও তা ছিল চাপা পড়ে। কিন্ত হঠাৎ করে তারেক রহমানের দলে কিছুটা সক্রিয় হয়ে ওঠায় আবার সেই মামলার হুমকি দিয়েছে সরকার দলীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট অভিযোগ করেছে তারেক রহমান বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি লাগামহীনভাবে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তারেক রহমান অন্যায় কাজ করে বিদেশে পালিয়ে থাকবেন, আবার সেখানে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন তা হতে পারে না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের কার্যকলাপে তারেক রহমান হতাশ। এছাড়াও গুলশান কার্যালয়ে নীতি নির্ধারণী বৈঠকে আন্দোলনের যে কৌশল নির্ধারন করা হয় তা দ্রুত সরকার ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জেনে যায় । ফাঁস হয়ে যায় সকল আন্দোলনের কৌশল। তাই অধিকাংশ সময় আন্দোলন সফল করা সম্ভব হয় না। এই জন্যই কি তারেক রহমান এই নীরবতা ?