পুলিশ’ই কি তবে হত্যা করলো ব্লগার নিলয়কে!

0

aS9VFcC04wrPশুক্রবার একজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে অতীতের হত্যাকাণ্ডগুলোর ধারাবাহিকতা সেটা বুঝাই যায়। কারন হত্যাকাণ্ডের ধরণ একদমই এক। যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি একজন ব্লগার ছিলেন। ব্লগার নিলয় অনেক দিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।

ব্লগার বাবু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি তাঁর ফেসবুকে যা লিখছিলেন তা পুরোপুরি তুলে ধরছি- “আমাকে দুজন মানুষ অনুসরণ করেছে গত পরশু। ‘অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার’ প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান শেষে আমার গন্তব্যে আসার পথে এই অনুসরণটা করা হয়। প্রথমে পাবলিক বাসে চড়ে একটা নির্ধারিত স্থানে আসলে তারাও আমার সাথে একই বাসে আসে। এরপর আমি লেগুনায় উঠে আমার গন্তব্যস্থলে যাওয়া শুরু করলে তাদের মধ্যে একজন আমার সাথে লেগুনায় উঠে। লেগুনায় বসে আমার মনে পড়ে বাসে তো এই ব্যক্তিই ছিলো কিন্তু তারা তো দুইজন ছিল। মনে মনে ভাবি হতেই পারে, একজনের গন্তব্য অন্যদিকে তাই সে চলে গেছে।

এ পর্যন্ত ব্যপার স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে লেগুনায় বসে সেই যুবক ক্রমাগত মোবাইলে টেক্সট করছিল যা দেখে আমার সন্দেহ হয়। আমি আমার নির্ধারিত গন্তব্যস্থলের আগেই নেমে গেলে আমার সাথে সেই তরুণও নেমে পড়ে। আমি বেশ ভয় পেয়ে সেখানের একটি অপরিচিত গলিতে ঢুকে যাই। পরে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ঐ তরুণের সাথে বাসে থাকা আরেক তরুণ এসে যোগ দিয়েছে এবং তারা আমাকে আর অনুসরণ না করে গলির মুখেই দাড়িয়ে আছে। তখন থেকে আমি নিশ্চিত হলাম যে আমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে কারণ তাদের দুজনের গন্তব্য একই জায়গায় হলেও তারা ভিন্নভাবে এসেছিলো এবং আমাকে অনুসরণ করেছিলো। আমি গলির আরও অনেক ভিতরে যেয়ে রিক্সা নিয়ে হুড ফেলে আমার গন্তব্যস্থলে যাই এবং পরে কাছের এক বন্ধুর সহযোগিতায় আপাত নিরাপদেই পৌছাই।

এই ঘটনায় জিডি করতে যেয়ে আরও উদ্ভট পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। প্রথমেই এক পুলিশ অফিসার ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছিলো যে এই ধরণের জিডি পুলিশ নিতে চায় না, কারণ ব্যক্তির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে যে কর্মকর্তা জিডি গ্রহণ করবে তার একাউন্টেবেলিটি থাকবে সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আর যদি ঐ ব্যক্তির কোনো সমস্যা হয়, সেইক্ষেত্রে ঐ পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য চাকুরী পর্যন্ত চলে যেতে পারে। থানায় জিডি করতে ঘুরেও একই চিত্র দেখলাম, অনুসরণকালে অনেকগুলো থানা অতিক্রম করার জন্য গতকাল ঘটনাস্থলের আওতায় থাকা একটি থানায় গেলে তারা জিডি নিলো না, তারা বললো আমাদের থানার অধীনে না, এটা অমুক থানার অধীনে পড়েছে ওখানে যেয়ে যোগাযোগ করুন, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যান”!

তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো! এর মানে তো পুলিশ তার নিরাপত্তা দিতে চায়নি। অর্থাৎ রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা দিতে কেবল ব্যর্থ হয়েছে তাই না, নিরাপত্তাই দিতে চায়নি উল্টো দেশ ছাড়তে বলেছে।

এর মানে দেশ কি তাঁর নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ভয় পাচ্ছে? নাকি দিতে চাচ্ছে না? দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ কি করে একটি দেশের পুলিশ দিতে পারে ভাবতেই অবাক হচ্ছি। শুনেছি ফেসবুকের মাধ্যমেও নাকি পুলিশের কাছে অভিযোগ করা যায়। এই রকম নাকি একটা পেজ বা গ্রুপও আছে! তারা কি আদৌ কোন কাজ করছে? নাকি কেবল লোক দেখানো আর নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য এই সব করছে!

রাষ্ট্র ও পুলিশ বাহিনীকে জবাব দিতে হবে, কেন তারা একজন নাগরিকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলো। নইলে কি আমরা ধরে নেবো বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More