রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার গোড়ানে শুক্রবার বাসায় ঢুকে নীলাদ্র চ্যাটার্জি (৪০) নামে এক ব্লগারকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি ছিলেন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী। তিনি নিলয় নীল নামে ব্লগে লেখালেখি করতেন। তবে কী লিখতেন তিনি?
গত ৩ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটের সময় ‘আল্লাহর ঘর-সংক্রান্ত কিছু জিজ্ঞাসা’ শিরোনামে ব্লগে তিনি লিখেছেন, মসজিদ নাকি আল্লাহর ঘর, এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন সাধারণ মানুষ। মসজিদ কোনো আরাম-আয়েশের বা এলাকার গৌরবের স্থাপনা নয়। মসজিদ প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মিত হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো, মসজিদকে আলিশান হতে হবে কেন? একটি মসজিদ স্থাপিত হবে, সেখানে এবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু তাকে সুসজ্জিত করতে হবে কেন? আমাদের দেশের মসজিদগুলোকে এখন এয়ার কন্ডিশন করা হচ্ছে।
বন্ধ হলো রোদেলা প্রকাশনী!: গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ২৯ মিনিটের সময় ‘টুয়েন্টি থ্রি ইয়ারস, এ স্টাডি অব দ্য প্রফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ শিরোনামে লিখেছেন, পার্সিয়ান রাইটার আলি দস্তির ‘টুয়েন্টি থ্রি ইয়ারস, এ স্টাডি অব দ্য প্রফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছিল রোদেলা প্রকাশনী। এবারের বইমেলায় গ্রন্থটি ছিল একেবারেই হটডগ। তবে মৌলবাদীরা মেলায় এসে ধর্মানুভূতি খুঁজে খুঁজে আহত বোধ করেছে বইটি দেখে। প্রথম দিকে বইটি নিয়ে বিতর্ক উঠলে প্রকাশক ক্ষমা চেয়ে বইটি মেলা থেকে তুলে নেন। কিন্তু এরপরও একাধিকবার বাংলাবাজারে রোদেলা প্রকাশনীর ওপরে হামলা চালায় এবং মেলায়ও হামলা চালানোর চেষ্টা করে মৌলবাদীরা।
অবশেষে যৌনদাসী সাপ্লাইয়ের টেন্ডার পেল বাংলাদেশ!: গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা ৩৩ মিনিটের সময় ‘অবশেষে যৌনদাসী সাপ্লাইয়ের টেন্ডার পেল বাংলাদেশ!’ শিরোনামে লিখেছেন, দুবাইয়ের অলিতে-গলিতে যখন আফ্রিকান জানোয়ারদের যৌনক্ষুধা মিটিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারীরা, স্বদেশি মা-বোনদের কান্নায় যখন প্রতিনিয়ত আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে লেবাননে, তখন তার কোনো কূলকিনারা না করে উল্টো সৌদি আরবে ‘হাউস মেইড’ পাঠাবার নামে সেই বাংলাদেশের নিরীহ নারীদের ইজ্জত বিক্রি করতে কি উঠেপড়ে লেগেছে আজ বাংলাদেশ সরকার? জঘন্য সব বিকৃত যৌন রুচির অশিক্ষিত-বর্বর একশ্রেণির সৌদি পুরুষের ২৪ ঘণ্টা সেক্স ভায়োলেন্সের মুখে বাংলার অজপাড়াগাঁওয়ের অবলা নারীরা নিজেদের কীভাবে কতটা সামাল দেবেন, তাই নিয়ে তোলপাড় চলছে এখন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও।
ছাগল নারী ও কুকুর পুরুষের অকথ্য কথন : ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ‘ছাগল নারী ও কুকুর পুরুষের অকথ্য কথন’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, জীবনে কয়টা প্রেম করেছেন? আপনার প্রেমের বয়স যদি হপ্তাখানেকও হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেই প্রেমগুলোতে বিয়ে করবেন বলে সঙ্গীকে কথা দিয়েছিলেন? বাদ দেন রিয়াল লাইফ, ভার্চুয়াল লাইফে ২/৪ দিনের পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ হতে না হতেই বিয়ে করবেন, বাচ্চার নাম কী রাখবেন_ এ ধরনের নানা স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন। আর এই আপনি সুশীল মানুষ সমালোচনা করেন রুবেলকে নিয়ে!
এবার আসছে হালাল হুইস্কি : ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর রাত ১টা ১৫ মিনিটে ‘এবার আসছে হালাল হুইস্কি’ শিরোনামে লিখেছেন, মুমিনরা কেন যেন একটু হালাল বেশিই খোঁজে। দেশে থাকতে যেসব বাঙালি কোনোদিন হালাল খোঁজেননি, সেও ইউরোপের দেশে গিয়ে হালাল গোশত খুঁজে বেড়ান। এর জন্য সে বেশি টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু হালাল জিনিসটা তার চাই-ই চাই। ছোটকালে সাবানের বিজ্ঞাপনে দেখতাম ১০০ শতাংশ হালাল। সবকিছুরই হালাল ভার্সন বের হচ্ছে। গুগুলে গিয়ে মুমিনরা আজকাল হারাম পণ্যের বদলে হালাল পণ্য দেখে, কারণ ওগুলো দেখলে কোনো গুনাহ হয় না।
জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ : ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিটে ‘জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ’ শিরোনামে লিখেছেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদের হুমকি : বাংলাদেশের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বাংলাদেশে শতাধিক জঙ্গি সংগঠন রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে চলছে।
হরেক রকম সরস্বতী : ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ৫১ মিনিটে ‘হরেক রকম সরস্বতী’ শিরোনামে লিখেছেন, ঋগ্বেদের অধিকাংশ স্থলেই সরস্বতী শব্দ সিন্ধু নদ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থলে মধ্যদেশস্থ দেবনদী অর্থেও এর প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই। ষোড়শ ঋকের দ্বিতীয় ম-লের ৪১তম সূক্তে সরস্বতী মাতৃগণের, নদীগণের ও দেবগণের শ্রেষ্ঠা বলে বর্ণিত হয়েছেন। ইনি ব্রহ্মাবর্তের একতর সীমা এবং কুরুক্ষেত্রে অন্তরিত হয়ে গঙ্গা যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তবে পরবর্তী বৈদিক যুগে নদীদেবতা হিসেবে মাহাত্ম্য হারিয়ে ইনি সাহিত্য, শিল্প ও সংগীতকলার দেবী হিসেবে পরিচিতা হন। শাস্ত্রে আমরা অনেক রকম সরস্বতীর পরিচয় পাই।
বৌদ্ধশাস্ত্রে পুরুষতন্ত্র : নারীরা হলো উন্মুক্ত মলের মতো দুর্গন্ধযুক্ত : ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ‘বৌদ্ধশাস্ত্রে পুরুষতন্ত্র : নারীরা হলো উন্মুক্ত মলের মতো দুর্গন্ধযুক্ত’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, পুরুষতন্ত্রের নিকট নারীর দুর্নামের ক্ষেত্রে মাতাকেও ছাড় দেয়নি বৌদ্ধধর্মীয় শাস্ত্র। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব ৬১ নম্বর জাতক, যাকে অশাতমন্ত্র জাতক বলা হয়। এই জাতকের বর্তমান বস্তুতে রয়েছে গৃহকর্মে উৎসাহী ব্রাহ্মণ যুবককে তার পিতামাতা পুনর্বার গুরুর নিকট পাঠায় নারী চরিত্রের দোষ অনুধাবন করে সংসার-বৈরাগ্য লাভের উদ্দেশ্যে। মাতাপিতার পরামর্শে সে গুরুর নিকট অশাতমন্ত্র দীক্ষায় প্রত্যাশী হয়। অশাতমন্ত্র বলতে সহজভাবে বুঝানো হয় অমঙ্গল বিষয়ে সচেতনতার বিদ্যা। আর বৌদ্ধধর্ম অনুসারে নারীরাই হলো এই বিদ্যার কেন্দ্র, অর্থাৎ অমঙ্গলের মূল।
পুরুষাঙ্গ কর্তনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই : ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্ব্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে ‘পুরুষাঙ্গ কর্তনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘আজকাল নতুন এক ধরনের সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে, তা হলো পুরুষাঙ্গ কর্তন। প্রায় প্রতিদিনই ভয়ঙ্কর এই সহিংসতা দেখতে পাই পত্রিকায়। এ ধরনের সহিংসতায় কেউ কেউ খুশি হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি অাঁতকে উঠি। কোথায় যেন এক ধরনের কষ্ট ও আতঙ্ক অনুভব করি।’