বরগুনার আমতলী-পুরাকাটা রুটের পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের বিষয়টি একসময়ে ছিল কল্পনারও অতীত, ছিল আকাশ কুসুম স্বপ্ন। সেই আকাশ কুসুম স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। চীন সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে নবম ও দশম মৈত্রী সেতু নিয়ে যে কথা-বার্তা চলছে তার মধ্যেই রয়েছে বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু। গত বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তরের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এ সময় সেতুমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে আরো নতুন দুটি সেতু (নবম ও দশম মৈত্রী সেতু) নির্মাণে চীন সরকার সহায়তা করবে। সম্ভাব্য ওই সেতু দুটিই নির্মিত হবে, বরগুনা জেলার আমতলী এবং পটুয়াখালী জেলার গলাচিপায়। মন্ত্রী আরো জানান, আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত আচমত আলী খান বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি দুই দেশের বন্ধুত্বের সপ্তম সেতু। সাত শ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকা। মূল সেতুটির পাশাপাশি টেকেরহাট, টুমচর এবং আঙ্গারিয়ায় আরো তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২০ আগস্ট সেতুটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও জানান, চীন বিশ্ব অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে চীনের সহযোগিতায় ছয়টি মৈত্রী সেতু হয়েছে বলে জানান তিনি। চীনের অর্থায়নে পিরোজপুর (বেকুটিয়া সেতু) কচা নদীর ওপর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়ে প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।” অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
পায়রা সেতু প্রসঙ্গে বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু কালের কণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বরগুনা এসেছিলেন তখন তাঁর কাছে বরগুনা ও বরগুনাবাসীর উন্নয়নে ৪২ দফা দাবি পেশ করেছিলেন তিনি। ওই ৪২ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বরগুনা-আমতলী রুটের পায়রা সেতু।
অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, “বরগুনার আমতলী পুরাকাটা রুটের তিন কিলোমিটার প্রশস্ত খরস্রোতা পায়রা নদীর ফেরি পার হয়ে রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর বরিশালসহ পটুয়াখালী জেলা, সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত এক কোটি অধিবাসীর। খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই ফেরি পার করে থাকে। তাই পায়রা সেতু নির্মিত হলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আমি মনে করি।”
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু আরও বলেন, “পায়রা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার পরপরই পর্যায়ক্রমে বরগুনা-কাকচিড়া রুটের বিষখালী নদীতে আরও একটি সেতু তৈরি করা হবে। যা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন সাধন করবে। এতে বঙ্গোপসাগরের রূপালী ইলিশ থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের নদনদী, খাল, বিল, মাছ, গাছ সবই তখন অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে। এভাবেই এগিয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চল, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।”
এদিকে, পায়রা সেতু নির্মাণের বিষয়ে এখনও বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছে বরগুনার সাধারণ মানুষ। অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন বিষয়টি। কেউ কেউ কিছুটা বিশ্বাসে আনতে পারলেও কবে তা বাস্তবায়িত হবে কিংবা নিজেদের জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারবেন কিনা- তা নিয়েই চলছে জল্পনাকল্পনা। তবে গত বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যের পর থেকে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে বরগুনার সচেতন মহলের মাঝে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পায়রা সেতু বাস্তবায়নের খবর শুনে আনন্দ মিছিল করেছে জেলা তরুণ লীগ ও জেলা ছাত্রলীগ।
মিছিল শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা জেলা পরিষদ প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় বক্তব্য দেন, জেলা তরুণ লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুরাদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া সাবু, ইউসুফ হোসেন সোহাগ, সাবেক ছাত্রনেতা শাওন তালুকদার প্রমুখ।