মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত ও ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের শানে অশেষ দরুদ আর সালাম পেশের মাধ্যমে শুরু করছি আজকের আলোচনা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, সব কিছুরই একটি ভিত্তি রয়েছে, আর ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের প্রতি তথা আমার পবিত্র বংশধরদের (আহলে বাইতের) প্রতি ভালবাসা।
তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক বিষয়েরই রয়েছে জাকাত। আর শরীর বা দেহের জাকাত হচ্ছে রোজা।’
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য রিজিক হালাল হওয়া খুবই জরুরি। হালাল রিজিকের প্রভাব শুধু নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যের জন্যই যে জরুরি তা নয়, নিজের সন্তানের ওপরও এর প্রভাব থাকে। রুজি-রোজগারের মধ্যে খুব সামান্য ও এমনকি বিন্দু পরিমাণ হারাম এবং সুদের প্রভাব সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়। এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা ধর্মীয় সাহিত্যে স্থান পেয়েছে।
একবার প্রাচীন যুগের একজন বিশ্বখ্যাত আলেম তার শিশু পুত্র সন্তানকে মসজিদে নিয়ে আসেন। ওই শিশুকে অজুখানার কাছে বসিয়ে তিনি নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। ফিরে এসে দেখেন যে তার শিশু-পুত্র মুসল্লিদের ওজুর পানি তোলার পাত্রটি পেরেক জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ফুটো করে দিয়েছে। ওই আলেম দুঃখিত ও বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলেন কেনো এমন হল? ঘরে ফিরে স্ত্রীকে এই ঘটনা জানালে তিনি জানান, আমি বুঝতে পেরেছি যে কেনো এই মন্দ কাজটি আমাদের পুত্র করেছে। এ জন্য আসলে আমিই দায়ী। ও যখন আমার গর্ভে ছিল তখন আমি অনুমতি না নিয়ে এক ব্যক্তির বাগানের একটি ডালিমের মধ্যে সুঁই দিয়ে খোঁচা দিয়েছিলাম এবং সুঁইয়ে লেগে-থাকা ডালিমের রস জিভে লাগিয়েছিলাম!
ইমাম হুসাইন (আ.) একজন নিষ্পাপ ইমাম এবং বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিপূর্ণ মহামানব হওয়া সত্ত্বেও কারবালায় তাঁর যুক্তিপূর্ণ আহ্বান ও বক্তব্যে মুসলমান নামধারী ইয়াজিদ বাহিনীর মন বিন্দুমাত্র গলেনি। ইমামের মতে, এর কারণ ছিল হারাম খাদ্যের প্রভাব।
আমাদের জীবনে যদি এ জাতীয় ঘটনা ঘটে থাকে যে আমরা কেউ অন্যের এক পয়সা মূল্যেরও কিছু ভোগ করেছি বিনা অনুমতিতে এবং এ জন্য পরে মালিকের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করিনি তাহলে অবিলম্বে ক্ষমা বা সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। যদি মালিক মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তাদের কাউকেই পাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে তাদের নামে সদকা দেয়া উচিত।
আল্লাহর প্রতি ইয়াকিন বা দৃঢ়-বিশ্বাস ও ভরসা করা হচ্ছে খাঁটি মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা মন-ভাঙ্গা হয়ো না, হীনবল হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। মহান আল্লাহ সুরা ইব্রাহিমে বলেছেন, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (৭ নম্বর আয়াত)
রমজান মাস হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি হৃদয়ে ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করার মাস। আমাদের প্রচেষ্টা যদি আন্তরিক তথা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ আমাদের সমস্ত বৈধ দোয়া কবুল করবেন- এ ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত।
মহান আল্লাহ আমাদের সব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন এই দৃঢ়-বিশ্বাস আমাদের রাখা উচিত। আমাদের সমস্ত সমস্যার মূল কারণই এটা যে, আমরা এসব বিষয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি না। আন্তরিক-চিত্তে খোদায়ী পথ-নির্দেশনা চাইলে ও সাহায্য চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন-এই দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের রাখা উচিত। যা ঘটা আপাত দৃষ্টিতে অসাধ্য বলে মনে হয় তাও আল্লাহর সহায়তায় সাধন করা সম্ভব। বলা হয় ৭০ বার সুরা ফাতিহা পাঠের সুবাদে যদি মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যায় তাহলে বিস্মিত হবে না।
ইরানের তাব্রিজ শহরের বড় বাজারে একজন দিন-মজুর শ্রেণীর খোদাভীরু বৃদ্ধ ব্যক্তি কাজ করতেন। একদিন তিনি দেখছিলেন যে এক বালক বাজারের ছাদের আলো প্রবেশের পথ দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন: হে আল্লাহ! এই বালককে রক্ষা করুন। ফলে বালকটি শূন্যের মধ্যেই স্থির হয়ে থাকে। আর এ অবস্থায় তাকে মাটিতে নামান ওই শ্রমিক! ঘটনা দেখে বাজারের জনতার ভিড় জমে যায়। সবাই তাকে প্রশ্ন করছিলেন, আপনি কী এমন আমল করেছেন যে এভাবে বালকটিকে রক্ষা করতে পারলেন? আপনি কি একজন দরবেশ? ওই শ্রমিক বললেন, আমি বিগত ৬০ বছর ধরে আমার জানামতে কোনো পাপ করিনি এবং আল্লাহর নির্দেশ বা ফরজ কাজগুলো মেনে চলার চেষ্টা করেছি, তাই আল্লাহ আমার এই একটি প্রার্থনা কেনো কবুল করবেন না?
অনেক খোদাভীরু ব্যক্তির কথা জানা যায় যারা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে নদীর পানির ওপর দিয়ে এমনভাবে হেঁটে নদী পার হয়েছেন যেভাবে আমরা পার হই মাটির প্রান্তর বা রাস্তা। তাই যারা আল্লাহর ওলি তারা মুহূর্তেই পার হয়ে যান সমুদ্র এবং মুহুর্তের মধ্যে তারা চলে যেতে পারেন এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে! আর আমরা এসব অলৌকিক ঘটনা শুনে বলি: এসব কী করে সম্ভব!!? অন্যদিকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রদের জন্য এসব খুবই সাধারণ ঘটনা।